fbpx

প্রশ্নোত্তরে বাস্তু সমস্যার সমাধান
ইসলাম ধর্মের শুরু থেকেই এই শাস্ত্রের উৎপত্তি আরও সহজে বলতে গেলে বাবা আদম (আঃ) ও মা হাওয়া (আঃ) এর সৃষ্টির পর থেকেই তবে তৎপূর্ব ইতিহাস আমার জানা নেই।তবে আনুমানিক ৫/৬ হাজার বৎসর পূর্বে ভারতীয় মুনিঋষিগণ তদ্‌দেশীয় ভৌগোলিক অবস্থান অনুযায়ী এই শাস্ত্রের তাঁদের ধর্মাপোযোগী সংস্কার করেছেন কিন্তু তাঁরাতো আল্লাহ্‌র সৃষ্টির পঞ্চভূতাত্বক ব্যবস্থার কোন কিছু পরিবর্তন করতে পারেননি।সুতরাং এটা ভারতীয় শাস্ত্র নয়।

বাস্তু আসলে কী ?

উত্তরঃ ‘বস্’‌ ধাতু ও ‘তৃণ্‌’ প্রত্যয় থেকে বাস্তু শব্দের উৎপত্তি।এর অর্থ গৃহনির্মাণের কলা যা মানুষের দ্বারা নির্মিত ঘরবাড়িকে প্রাকৃতিক সমস্যা থেকে রক্ষা করে।যার দ্বারা পঞ্চভূতের সমানুপাতিক সংযোগ ঘটিয়ে মানুষ শারীরিক শক্তি ও সুস্বাস্থ্য লাভ করতে পারে।এ ছাড়া ক্রমাগত মানসিক ভারসাম্যকে ঠিক রেখে নৈসর্গিক শক্তিকেও সে সমানে পেতে পারে।শারীরিক শক্তি ও সে সমানে পেতে পারে।শারীরিক শক্তিও যথার্থ মানসিক ভারসাম্যের কারণেই ধর্ম, বুদ্ধি ঐশ্বর্য লাভ হয়।সুতরাং, বাস্তু কোনও জাদুমন্ত্র নয়।এ হল প্রাকৃতিক শক্তি, পাঞ্চভৌতিক তত্ত্বগুলির যথার্থ সংমিশ্রণ ও কৃত্রিম জ্ঞানের ফলশ্রুতি।এর দ্বারা পরিচালিত হয়েই পাওয়া যায় বুদ্ধি, শান্তিময় জীবন ও সমৃদ্ধির পথ।যিনি এই জ্ঞান সঞ্চয়ের পরে বাস্তু অনুসরণ করে বাড়িঘর তৈরি করবেন ক্রমশ তিনি ওই সব সুফল পেতে থাকবেন।এটা প্রমাণিত সত্য।তাই ‘বাস্তু’ অনুসরণ করলে হাতে হাতে সুফল মিলবে।

বিভিন্ন পৌরাণিক গ্রন্থাদি অনুসারে চার রকমের বাস্তু আছে:

১।
ভূমিবাস্তু : যেমন ধরিত্রী মা, বিভিন্ন প্রকারের জমি।
২।
গ্রহবাস্তু : যেমন ছোট বাড়িঘর, বহুতলবিশিষ্ট বাড়ি, রাজপ্রাসাদ, মন্দির ও জলাশয়।
৩।
শয়নবাস্তু : যেমন শোওয়ার খাট, পালঙ্ক, বসার চৌকি।
৪।
যানবাস্তু : যেমন পালকি, রথ, বিভিন্ন বাহন।

বাস্তুশাস্ত্র কি শুধুই হিন্দুদের জন্য ?

উত্তরঃ বাস্তুশাস্ত্রের কোনও জাত নেই।বাস্তু হল স্থাপত্যের কলা ও বিজ্ঞান।বাস্তু যে মানবে ফল তারই।কারণ বাস্তু উপদেষ্টা অর্থাৎ বিভিন্ন জ্ঞানী-গুনীরা বলেছেন, এ শাস্ত্র সকল মানবের কল্যাণের জন্যই সৃষ্টি করা হয়েছে।

বাস্তুশাস্ত্র কি শুধু আধুনিক বাড়িঘরের জন্যই প্রযোজ্য, নাকি কুঁড়েঘর বা মাটির ঘরের ক্ষেত্রেও সহায়ক হতে পারে?

উত্তরঃ আধুনিক বাড়িই হোক অথবা পুরনো ছোটখাটো বাড়ি অথবা কুঁড়েঘর যাই হোক না কেন প্রাকৃতিক শক্তি ও পাঞ্চভৌতিক তত্ত্বের প্রয়োজন হয় সব রকমের বসবাসকারীর বাড়িতেই।সুতরাং বাস’ নিয়ম মেনেই বাড়িঘর তৈরি করতে হবে অথবা পুরনো বাড়ি সংশোধন করতে হবে।বাড়ি বাড়িই, তা সে বিশাল প্রাসাদই হোক অথবা সামান্য কুঁড়েঘর।বাস্তুশাস্ত্র সর্বত্রই প্রযোজ্য।

প্রাচীনকালে রাজারাজড়ারা তাঁদের সাফল্যের জন্য বাস্তু অনুসরণ করতেন কি?

উত্তরঃ পুরাকাল থেকেই বাস্তু অনুসৃত হয়ে আসছে।রাজপ্রাসাদের বাস্তু এই শাস্ত্রের একটি আলাদা অধ্যায়।বাস্তু না মেনে রাজপ্রাসাদের যে কিছুই হত না তা জানাতে এই বিশাল অধ্যায় থেকে কেবলমাত্র রাজপ্রাসাদের বিভিন্ন বিভাগের কিছু নমুনা দেওয়া যাক।সে আমলের রাজপ্রাসাদের মোটামুটিভাবে যে সব আলাদা আলাদা অঞ্চল, কক্ষ ইত্যাদি চিহ্নিত করা হত সেগুলি হল: রাজভবন, ব্রহ্মপীঠ, মহিষীগৃহ, অভিষেকমণ্ডপ, আয়ূধালয় (অস্ত্রশালা), ধনালয় (কোষাগার), রত্ম-হেমাদিকালয়, ভোজন মণ্ডপ, পাকনালয় (রসুইঘর), পুষ্করিণী, কঞ্চুক্যালয় (চাকরবাকরদের বাসস্থান), পুষ্পমণ্ডপ, সূতিকামণ্ডপ (আঁতুড়ঘর), দাসদাস্যালয়, শয়নালয়, রাজকন্যাকালয়, গজালয় (হাতির থাকার জায়গা), অশ্বালয় এবং রক্ষকাবাস।রাজপ্রাসাদের অভ্যন্তরে থাকতো এই সব আলাদা আলাদা আবাস।এর বাইরে ছিল বহিঃশালা বা প্রাসাদের বাইরের দিকে যুবরাজালয়, আস্থান মণ্ডপ, পুষ্পোদ্যান, নৃত্যাগার, পুরোহিতালয়, ধেনুশালা, রহস্যবাসমণ্ডপ (লুকানো ঘর বা গুপ্ত ঘর), সন্ধিবিগ্রহ মণ্ডপ, কারাগৃহ, রঙ্গমণ্ডপ, বৈদ্যশালা বা চিকিৎসাগৃহ, জলগৃহ, সভাগৃহ, ক্রীড়াঙ্গন, সঙ্গীতাশালা, দূতাবাস প্রভৃতি।

বাস্তু সংশোধনের পর তার সুফল পেতে কত সময় লাগে?

উত্তরঃ এটা নির্ভর করছে যে বাড়িতে সংশোধন করা হচ্ছে তাকে কী ধরণের দোষ আছে তার উপর।যদি প্রাথমিক দোষ হয় সে ক্ষেত্রে সময় বেশি লাগবেই।কিন্তু গৌণ দোষ হলে বড়জোর ৪৫ দিন থেকে ৬০ দিনের মধ্যে সুফল মিলবে বলে আমি মনে করি এবং বাস্তবেও তা দেখেছি।

‘বাস্তুশাস্ত্র’ অধ্যয়ন কি অনিবার্য?

উত্তরঃ বাস্তুশাস্ত্রের উৎপত্তি মাননজীবনের নিরাপত্তা ও মানুষের কল্যাণের কথা ভেবেই হয়েছে।শিল্পশাস্ত্রে পরমজ্ঞানী মতে
এই শাস্ত্র অধ্যয়ন করে মানুষ সুস্বাস্থ্য, আরোগ্য, প্রখর বুদ্ধি, সন্তান, ধনধান্য ও ঐশ্বর্য লাভ করে থাকে।যাঁরা বাড়িঘর তৈরি করবেন তাঁদের উচিত বান্তুশাস্ত্রের নিয়মগুলি মেনে চলা।কারণ আধুনিক আর্কিটেক্ট ভাল মজবুত ও নয়নাভিরাম বাড়ির নকশা করতে পারেন ঠিকই, কিন্তু এ সব বাড়িতে সুস্বাস্থ্য, প্রখর বুদ্ধি, শান্তি ঐশ্বর্য প্রাপ্তির নিশ্চয়তা দেওয়া সম্ভব নয়।অভিজ্ঞতার প্রেক্ষিতে এ কথা জোর দিয়ে বলা যায়, বাস্তুশাস্ত্র অনুসরণ করে বাড়ি তৈরির পর বসবাস করলে সব অর্থে মানুষ সুখী ও সমৃদ্ধশালী হতে পারে।

বাস্তু সংশোধনের পর তার সুফল পেতে কত সময় লাগে?

উত্তরঃ এটা নির্ভর করছে যে বাড়িতে সংশোধন করা হচ্ছে তাকে কী ধরণের দোষ আছে তার উপর।যদি প্রাথমিক দোষ হয় সে ক্ষেত্রে সময় বেশি লাগবেই।কিন্তু গৌণ দোষ হলে বড়জোর ৪৫ দিন থেকে ৬০ দিনের মধ্যে সুফল মিলবে বলে আমি মনে করি এবং বাস্তবেও তা দেখেছি।

কোনও বাড়িতে ভাড়াটিয়া থাকেন।বাড়ির মালিক না হয়েও ভাড়াটিয়া বাস্তুশাস্ত্র মানলে কোনও ফল পাবেন কি?

উত্তরঃ বাস্তুর সঙ্গে মালিকানার কোনও সম্পর্ক নেই।বাড়ির কাঠামোর অভ্যন্তরে যিনি বা যাঁরা বাস করছেন, বাস্তুমানা বা না মানার প্রভাব তাঁদের উপরে পড়বেই।তবে বাস্তুশাস্ত্রে সবসময়ই স্বগৃহের বা স্বভিটের ওপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে।সে ক্ষেত্রে বাস্তুর দোষগুণ সংশোধন বা উন্নত করার নানা উপায় থাকবে গৃহমালিকের হাতেই।

নারী ও পুরুষের উপর জমির প্রভাবের কোনও পার্থক্য আছে কি?

উত্তরঃহ্যাঁ আছে।কারণ জমি হয় দুরকম।সূর্যভেদী (পুরুষ) আর চন্দ্রভেদী (স্ত্রী)।সূর্যভেদী অর্থাৎ যে জমি পূর্ব-পশ্চিমে বিস্তৃত।আর চন্দ্রভেদী বিস্তৃত উত্তর-দক্ষিণে।

কেন বাড়ির দক্সিণ-পশ্চিম দিক্‌টি কম উম্মুক্ত রাখা উচিত?

উত্তরঃ বাস্তুশাস্ত্র অনুসারে বাড়ির উত্তর-পূর্ব দিক্‌টি উম্মুক্ত রাখা উচিত।আর দক্ষিণ-পশ্চিম দিক্‌টি ভারী বলে সে দিক্‌টি খোলা না রেখে বরং আটকে রাখাই উচিত।আমাদের দেশের অবস্থিতি উত্তর গোলার্ধে।সূর্য নিজের অক্ষে ঘোরার জন্যেই সারা দেশেই দক্ষিণ-পশ্চিম দিক্‌ দিয়ে সূর্যরশ্মি সারা বছর ধরে প্রচুর পরিমাণে দীর্ঘক্ষণ ধরে পড়ে।শীত আর গ্রীষ্ম দুই ঋতুতে প্রখর সূর্যরশ্মি দক্ষিণ-পশ্চিম দিক্‌ দিয়ে আসে।আর সূর্যের ক্ষতিকর অতি বেগুনি রশ্মিও আসে সেই দক্ষিণ-পশ্চিম দিক দিয়েই।তাই দক্ষিণ-পশ্চিম দিক্‌টি আটকানো প্রয়োজন।বাস’শাস্ত্রেও বলা হয়েছে দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে উঁচু গাছ লাগাতে বা উঁচু মোটা দেওয়াল দিতে।গরমকালে যে খাড়াভাবে সূর্যরশ্মি পড়ে তা দক্ষিণ-পশ্চিম দিকের গাছের ছায়ায় প্রতিহত হয়।শীতকালে যে কোণাকোণি সূর্য রশ্মি পড়ে তার সামান্যই দক্ষিণ-পশ্চিম দিক্‌ দিয়ে আসতে পারে। এই কারণেই দক্ষিণ-পশ্চিম দিক্‌টি কম খোলা রাখাই শ্রেয়।

কেন গৃহকর্তার শয়নকক্ষ দক্ষিণ, দক্ষিণ-পশ্চিম বা পশ্চিমে বানানো উচিত?

উত্তরঃবাস্তুশাস্ত্র অনুসারে যে কোনও ভূমিকে পাঁচটি তত্ত্ব অনুসারে পাঁচটি অঞ্চলে ভাগ করা যায়।দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলটি ভূমি তত্ত্বানুসারী, অন্য তত্ত্বানুসারী নয়।তাই গৃহকর্তার শয়নকক্ষ দক্ষিণ, দক্ষিণ-পশ্চিম বা পশ্চিম দিকে করাই শ্রেয়।কেননা ভূমি তত্ত্বানুসারে অঞ্চল গৃহকর্তার শয়নকক্ষের পক্ষে আদর্শ।

আবার, সূর্যর পরিক্রমণের জন্য পৃথিবীর চুম্বক মেরুর চুম্বকশক্তির স্তর সন্ধ্যা ও রাত্রিকালে বদলে পশ্চিম দিকে যায়।সূর্যান্তের সময় চু্‌ম্বকের ধনাত্মক শক্তি থাকে পশ্চিম দিকে।এই ধনাত্মক শক্তিকে কাজে লাগানোর জন্যই গৃহকর্তার শয়নকক্ষ দক্ষিণ, দক্ষিণ-পশ্চিম ও পশ্চিম দিকে করাই সবচেয়ে ভাল।আর রাতের দিকে এই শয়নকক্ষে গৃহকর্তা দীর্ঘক্ষণ ধরে থাকেন কিন্তু দিনের বেলা থাকেন না।উপরন্তু এই ঘরে দিনের বেলায় প্রচুর আলোরও প্রয়োজন নেই।কাজেই গৃহকর্তার শয়নকক্ষ তৈরির সময় কোন দিকে তা করা উচিত সে বিষয়ে ভূমিতত্ত্বের ব্যাপারটি বিবেচনা করা ছাড়াও সূর্যের পরিক্রমণ এবং শক্তির বিষয় বিবেচনা করা প্রয়োজন।আর পাঞ্চভৌতিক তত্ত্বের পাঁচটি তত্ত্ব ভূমি, অগ্নি, বায়ু, পানি ও আকাশের মধ্যে ভূমিই একমাত্র চলনশীল নয়।কিন্তু বাকি চারটি তত্ত্বই চলনশীল।এই কারণেই দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে ভূমি থাকায় সেটি চলনশীল নয় বলে ভারী।

কেন বাড়ির উত্তর ও পূর্বদিকে লম্বা ও ঘন গাছ না লাগিয়ে দক্ষিণ ও পশ্চিম দিকে লাগানো উচিত?

উত্তরঃ লম্বা গাছ মাটি থেকে বেশি পরিমাণে পানি শুষে নেয়।আর পাতকুয়ো, টিউবওয়েল বা পুকুর বাস্তুমতে উত্তর-পূর্ব অঞ্চলে করা হয়।সেই উত্তর-পূর্বদিকে লম্বা লম্বা গাছ লাগালে পাতকুয়ো, টিউবওয়েল বা পুকুর থেকে বেশি পরিমাণে পানি শুষে নেবে।আবার শরৎকালে ধীরে ধীরে গাছের থেকে শুকনো পাতা ঝরে যায়।

সেই শুকনো পাতা ব্যাক্টিরিয়া তৈরি করে।কাজেই শুকনো পাতা পাতকুয়ো বা পুকুরে পড়লে পানি দূষণের সম্ভাবনা থাকে।তা ছাড়া লম্বা লম্বা গাছ পুকুর বা পাতকুয়োয় ছায়া তৈরির কারণে সূর্যরশ্মি সরাসরি পুকুর বা পাতুয়োর পানিতে পড়তে পারে না।কিন্তু লম্বা আর ঘন গাছ দক্ষিণ ও পশ্চিম দিকে লাগালে বিকেলের সূর্যের প্রখর তাপ থেকে বাড়িঘরকে রক্ষা তো করেই সেই সঙ্গে পশ্চিম ও দক্ষিণ দিককে ঠাণ্ডাও রাখে।

সূর্যের লাল উজানি (ইনফ্রারেড) রশ্মি আসে উত্তর-পূর্ব দিক থেকে।কাজেই উত্তর-পূর্ব দিকে লম্বা ও ঘন গাছ লাগালে সূর্যর উপকারী লাল উজানি রশ্মি আসতে বাধা পায়।আর পশ্চিম ও দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে লম্বা ও ঘন গাছ লাগালে সেই গাছ যেমন সূর্যতাপ আটকে বাড়িঘর রক্ষা করে বাড়িকে সুশীতল রাখে তেমনই সূর্যের ক্ষতিকর অতিবেগুনি (আলট্রা ভায়োলেট) রশ্মিও আটকে দেয়।

বাস্তুশাস্ত্রে মাপের প্রধান একক হল ‘আঙ্গুলি’ এবং ‘হস্ত’।আধুনিক কালে এর সমতুল একক কী কী?

উত্তরঃ আমাদের পূর্বসূরিরা ‘বাস্তুদেবতা’ এবং ‘বাস্তুভূমি’ পরিমাপের জন্য ‘আঙ্গুলি’ ও ‘হস্ত’-কে মাপের একক হিসাবে ব্যবহার করতেন।মধ্যকার মধ্যম উপাস্থিই হল ‘আঙ্গুলি’-র পরিমাপ।‘ময়মতম’-এ বলা হয়েছে ৮টি যবের দানা পাশাপাশি রাখলে তা এক ‘আঙ্গুলি’-র সমান হবে।আধুনিক মাপ অনুসারে এক আঙ্গুলি হল ৩/৪ ইঞ্চি বা প্রায় ১.৯ সেমির সমান।আর এক ‘হস্ত’ হল ২৪ আঙ্গুলির সমান যা ১৮ ইঞ্চি বা ৪৫.৭ সেমির সমতুল।‘আঙ্গুলি’ এবং ‘হস্ত’ ছাড়াও বাস্তুশাস্ত্রে অন্যান্য এককের কথাও বলা হয়েছে।যেমন- যব, কিসকু, প্রাজাপত্য, রজ্জু ইত্যাদি।এক রজ্জু হল ৮৩২ আঙ্গুলির সমান, যা ৫২ ফুট বা প্রায় ১৫.৮৫ মিটার।

প্রাচীনকালে কারিগর এবং ভাস্করের মূর্তির মাপ হিসাবে ‘আঙ্গুলি’ ব্যবহার করতেন।আর বাস্তু বিধি অনুসারে বাড়ি, রাজপ্রাসাদ এবং গৃহের আসবাব তৈরির সময় তার মাপ হিসাবে রজ্জুকে ব্যবহার করতেন।

বাস্তুশাস্ত্রে বাড়ির চৌহদ্দিতে কেন গাছ লাগনোর কথা বলেছে?

উত্তরঃ বাস্তুশাস্ত্রে তুলসী গাছকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।কেননা বাতাস থেকে বেশি পরিমাণে কার্বন-ডাই-অক্সাইড শোষণ করে অক্সিজেন পরিত্যাগ করে।তুলসীর আর একটি গুণ হল এটি জীবাণুনাশক।এ ছাড়াও নারকেল, আম, অশোক, চামেলি, কাঁঠাল এবং নিম গাছও পোঁতা উচিত কেননা এদের রয়েছে ভেষজ গুণ।বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণে দেখা গিয়েছে যে নিম এবং তুলসী পোকামাকড় থেকে রক্ষা করার বিশেষ গুণ রয়েছে।আর অশোক বৃক্ষের রয়েছে শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা।পূর্বে বর্ণিত গাছগুলির রয়েছে ধনাত্মক শক্তি বিকিরণের ক্ষমতাও।আর যে সমস্ত গাছে কাঁটা আছে এবং দুধ চুঁইয়ে পড়ে সেগুরি কিবিকরণ করে ঋণাত্মক শক্তি।বাস্তুশাস্ত্রে দক্ষিণ, পশ্চিম এবং দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে লম্বাগাছ লাগানোর কথা বলা হয়েছে।আর ছোট গাছ ও গুল্ম লাগানো শ্রেয় উত্তর, পূর্ব এবং উত্তর-পূর্ব দিকে।কেবলমাত্র উত্তর-পূর্ব দিকে পাতাবাহার গাছ লাগানো যেতে পারে।এতে সূর্যের লাল উজানি রম্মি আসতে অসুবিধা সৃষ্টি হয় না।

কোনও বাড়ি বা বহুতল বাড়ির ফ্ল্যাটে রান্নাঘরের বিষয়ে বাস্তুশাস্ত্রের কী দিক্‌ নির্দেশ আছে?

উত্তরঃরান্নাঘর করতে হবে বাড়ির দক্ষিণ-পূর্ব বা উত্তর-পশ্চিম কোণায়।রান্নাঘরের পূর্ব দেওয়ালে রান্নার প্লাটফর্ম তৈরি করে প্লাটফর্মের দক্ষিণ-পূর্ব কোণায় গ্যাসের ওভেন রাখতে হবে।আর রান্নাঘর যদি উত্তর-পশ্চিম দিকে হয় তবে রান্নার প্ল্যাটফর্ম তৈরি করতে হবে পশ্চিম দেওয়ালে।কখনওই উত্তর দেওয়ালে যেন প্ল্যাটফর্ম না থাকে।আবার রান্না কখনওই কোনও ঘরের উত্তর-পূর্ব বা দক্ষিণ-পশ্চিম কোনায় করা উচিত নয়।বাড়ি বা ফ্লাটের কেন্দ্রস্থল বা ব্রহ্মস্থলেও রান্নাঘর করা উচিত নয়।বহুতল ফ্ল্যাটে পূর্ব বা পশ্চিম দিকের ঘরের দক্ষিণ-পূর্ব কোনায় রান্না করা চলতে পারে।তবে রান্না করার সময় রন্ধনকারির মুখ পূর্বদিকের দেওয়ালে থাকলে ভাল।পূর্ব দিকে মুখ করে রান্না করা সম্ভব না হলে পশ্চিম দিকে মুখ করে রাঁধা চলতে পারে।রান্নার প্ল্যাটফর্মের সোজাসুজি যেন রান্নাঘরের দরজা না থাকে।ফ্রিজ রাখতে হবে রান্নাঘরের দক্ষিণ বা পশ্চিম দিকে।

গাড়ি পার্ক করার জায়গা ও গাড়ি ঢোকার দরজা এবং দরদালান তৈরির ব্যাপারে কী কোনও মৌলিক নির্দেশ আছে বাস্তুতে?

উত্তরঃ বাস্তুমতে গাড়ি পার্ক করার জায়গা উত্তর-পূর্বদিকে কখনও করা উচিত নয়।উত্তর-পশ্চিম দিকে পার্কিংয়ের স্থান করা সর্বোত্তম।আধুনিক বহুতল বাড়িতে বেসমেন্ট বা মাটির নীচের ঘরে গাড়ি রাখার ব্যবস্থা থাকে।কিন্তু সেক্ষেত্রে বেসমেন্টে উত্তর ও পূর্বদিকে গাড়ি পার্ক করা যেতে পারে।

দরদালান করা উচিত হয় পূর্বদিকে, নয়তো উত্তরে।যদি তা পশ্চিমে করতে হয় তবে যেন দক্ষিণ-পশ্চিম কোনা থেকে দূরে থাকে।আর দক্ষিণে করলে তা করা উচিত দক্ষিণ-পূর্ব কোনায়।দরদালানের ঢাল উত্তর বা পূর্ব দিকে থাকলে ভাল।উত্তর পূর্বদিকের দরদালানের ছাদ যেন বাড়ির ছাদের থেকে কমপক্ষে ২ ইঞ্চি নিচে থাকে।আর গাড়ি ঢোকার দরজা পূর্ব বা উত্তর-পূর্বদিকে করা যেতে পারে।সেই দরজার উচ্চতা যেন সীমানা প্রাচীরের উচ্চতার থেকে কম হয়।

বেসমেন্ট তৈরির ব্যাপারে কী কী সতর্কতা নেওয়া জরুরি?

উত্তরঃ বেসমেন্ট তৈরি করলে তা উত্তর বা পূর্বদিকে করা সবচেয়ে ভাল।দক্ষিণ বা পশ্চিম দিকে তা কখনওই করা উচিত নয়।আর বেসমেন্টের উচ্চতা কমপক্ষে ৯ ফুট হওয়া বাঞ্ছনীয়।

বেসমেন্ট পুরোপুরি মাটির তলায় থাকলে তার মধ্যে উপকারী সূর্যরশ্মি প্রবেশ করতে পারে না।সে কারণে বেসমেন্টের উচ্চতা ২৫ শতাংশ যেন মাটির স্তর থেকে উপরে থাকে।তা হলে প্রথম দুই প্রহরে সূর্যরশ্মি বাধাপ্রাপ্ত না হয়ে বেসমেন্ট প্রবেশ করতে পারবে।বেসমেন্ট তৈরির সময় নকশা এমনভাবেই করতে হবে।প্রতিফলনের সাহায্যে সূর্যরশ্মি বেসমেন্টে ঢোকানোর জন্য বড় বড় আয়না ব্যবহার করা উচিত।এটি বেসমেন্টে বাস্তুশক্তি বৃদ্ধির সহায়তা করে।অসুস্থ্য লোককে বেসমেন্টে রাখা অনুচিত।

শহর পরিকল্পনার জন্য বাস্তুর নির্দেশাবলি কী কী ?

উত্তরঃবাস্তুশাস্ত্র অনুসারে শহরের অবস্থিতি নদী, হ্রদ বা সমুদ্রের কাছাকাছি হওয়া বাঞ্ছনীয়।শহর যেন ঘেরা থাকে সবুজ দিয়ে।প্রচুর সূর্যরশ্মি পাওয়ার জন্যে পূর্বদিক্‌টি যেন হয়। জঙ্গল বা জলপ্রপাতের কাছে শহর তৈরির পরিকল্পনা করা ঠিক নয়।

প্রত্যেক শহরেই বাজার, খেলার মাঠ ও বিদ্যালয় থাকা দরকার।শহরের আকৃতি হওয়া উচিত বৃত্তাকর, আয়তাকার, বর্গাকার অথবা ডিম্বাকার।বিষমাকার শহর বাস্তুসম্মত নয়।আমাদের দেশের ৯৯% শহর, নগর, বন্দর বাস্তু শাস্ত্রের নিয়ম মেনে নির্মিত হয়নি তদ্রুপ ৯৫% বাড়ি, অফিস, কারখানা।বাস্তু শুধু শহরের বিষয়েই বলেনি, কেমন শহর রাজ্যের রাজধানীর উপযুক্ত তাও বর্ণনা করেছে।শহরের আকার দেখেই রাজধানী নির্বাচিত করতে হবে।বাস্তুসম্মত শহরের নকশা কেবল প্রধান শহরের জন্য নয় আধুনিক শহরের ক্ষেত্রেও সুপ্রযোজ্য।

সংলগ্ন ভূখণ্ড ক্রয়ের ব্যাপারে বাস্তুতে কী নির্দেশ আছে?

উত্তরঃ যদি বর্তমান জমির সংলগ্ন উত্তর-পূর্বদিকে কোনও জমি থাকে তবে সেই জমি বাজারদর থেকে বেশি দাম দিয়েও কেনা উচিত।উত্তর-পূর্বদিকের বর্ধিত ভূখণ্ড সুস্বাস্থ্য ও উন্নতির সহায়ক্‌ দক্ষিণ-পূর্ব দিক্‌ থেকে দূরে পূর্বদিকের সংলগ্ন জমিও সুস্বাস্থ্যের কারণ।আবার উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে দূরে উত্তর দিকের সংলগ্ন জমিও কেনা যেতে পারে।কিন্তু দক্ষিণ-পূর্ব, দক্ষিণ-পশ্চিম ও উত্তর-পশ্চিম দিকের সংলগ্ন জমি কেনা উচিত নয়।এমনকি এই দিক্‌গুলির জমি কাউকে ব্যবহার করতে দেওয়াও উচিত নয়।

বাস্তুশাস্ত্রে আকাশ অর্থাৎ উর্দ্ধদিকের প্রয়োজনীয়তা কী?

উত্তরঃ ভূ-বিজ্ঞান মতে দিক্‌ আছে আটটি।কিন্তু বাস্তু মতে মোট দিক্‌ হল দশটি, যার মধ্যে প্রধান চারটি দিক্‌ – উত্তর, দক্ষিণ, পূর্ব ও পশ্চিম এবং চারটি উপদিক্‌ -ঈশান, আগ্নেয় (অগ্নি), নৈর্ঋত ও বায়ব্য (বায়ু)। আর নবম দিকটি হল আকাশ (ঊর্ধ্ব) এবং দশম দিকটি পাতাল (অধঃ)।

মহাজাগতিক রশ্মি আসে আকাশ থেকে।যা বাস্তুমতে নবম দিক্‌।এই রশ্মি অনন্ত।সারা বছর ২৪ ঘণ্টা ধরেই এটি লভ্য।কিন্তু সূর্যরশ্মি পাওয়া যায় সূর্য করোজ্জ্বল দিনে সর্বাপেক্ষা ১৪ ঘণ্টা।আর মহাজাগতিক রশ্মি দিন এবং রাত উভয় সময়েই মেলে সারা বছরেই।উপরন্ত মহাজাগতিক রশ্মির বৈশিষ্ট্য হল পৃথিবীর মাটি অর্থাৎ ভূমি ভেদ করে তা প্রবেশ করে।তাই বাস্তুশাস্ত্রে আকাশের এত গুরুত্ব।

দশম দিক্‌ অর্থাৎ পাতালের কতটা গুরুত্ব রয়েছে বাস্তুশাস্ত্রে ?

উত্তরঃ বাস্তুশাস্ত্র মতে দশম দিক্‌টি হল পাতাল।আকাশ থেকে যেমন অনন্ত মহাজাগতিক রশ্মি মেলে, তেমনই মেলে পাতাল থেকে ভূতেজ।ভূ অর্থাৎ জমিতে থাকতে পারে মৃত্তিকা ছাড়াও ছাই, পাথর, হাড়গোড় ও অন্যান্য ক্ষতিকারক বস্তু।বিজ্ঞানীরা দেখেছেন ক্ষতিকারক বস্তুগুলি থেকে ঋণাত্মক শক্তি প্রবাহিত হয়।তাই বাস্তুশাস্ত্র মতে এই ক্ষতিকারক ঋণাত্মক বস্তুগুলি থেকে ঋণাত্মক বিকিরণ থেকে রেহাই পেতে বাড়ি করার সময় মাটিরন স্তর থেকে নিদেনপক্ষে ৩ ফুট উঁচুতে বাড়ির ভিত করা শুভদায়ক।

বাড়ি করার সময় কেন উত্তর-পূর্ব দিকে কোনও প্রকার নির্শাণ না করে খালি রাখার কথা বলা হয়েছে বাস্তুশাস্ত্রে?

উত্তরঃ সূর্য পরিক্রমণ করে দুটি আয়নে।একটি উত্তরায়ণ, অপরটি দক্ষিণায়ন।উত্তরায়ণে সূর্য চলে উত্তরাপথে এবং দক্ষিণায়নে দক্ষিণ পথে।দুই অয়নে সূর্যোদয়ের মধ্যে সামান্য কয়েক ডিগ্রির তফাত দেখা যায়।সূর্যকিরণে আছে আলট্রা-ভায়োলেট বা অতিবেগুনি রশ্মি এবং ইনফ্রা-রেড বা লাল উজানি রশ্মি।আমরা সূর্যের যে সাদা আলো দেখতে পাই এর মধ্যে লুকিয়ে রয়েছে সাতটি রং- বেগুনি নীল, আসমানি, সবুজ, হলুদ, কমলা লাল।এই লাল রঙেই মিশে রয়েছে উপকারী লাল উজানি রশ্মি (ইনফ্রা-রেড রে)।আর বেগুনি রঙেই রয়েছে অত্যন্ত বেশি পরিমাপে মানবদেহের পক্ষে ক্ষতিকারক অতিবেগুনি রশ্মি (আলট্রা-ভায়োলেট রে)।

সূর্য দুই অয়নেই ওঠে উত্তর-পূর্ব দিকে।সে কারণে উত্তর-পূর্ব দিক্‌ খোলা রাখা অত্যন্ত জরুরি। সকালের সূর্য থেকে লাল উজানির স্রোত ধেয়ে আসে। এই লাল উজানি রশ্মি মানবদেহে উপকারী বস্তু বলে উত্তর-পূর্ব দিকে বাড়িঘর তৈরি না করে খোলা রাখাই শ্রেয়।শুধু তাই নয, ‌উত্তর-পুর্বদিকে পুকুর খোলা বা পাতকুয়ো অর্থাৎ জলের ব্যবস্থাও করা উচিত।পানি সূর্যের ক্ষতিকারক রশ্মিগুলি শোষণ করে নেয়।বাস্তুশাস্ত্র মতে পানির ট্যাঙ্ক বা টিউবওয়েল উত্তর-পূর্ব দিকে করাই বিধেয়।উত্তর-পূর্ব দিকে যদি শৌচাগার বা রান্নাঘর তৈরি করা হয়, তা হলে সূর্যরশ্মি দূষিত হবে যা মানবদেহের পক্ষে ক্ষতিকর।

তাই উত্তর-পূর্ব দিকে ইবাদত ঘর বা পড়ার ঘর করার নির্দেশ রয়েছে বাস্তশাস্ত্রে।বাড়ির উত্তর-পূর্ব দিকটি খোলা রাখার আর একটি বৈজ্ঞানিক কারন হল, পদার্থবিজ্ঞানী কিরচফের সূত্র অনুসারে যে কোনও বস্তু যে পরিমাণ তরঙ্গ দৈর্ঘ্য শোষণ করে সেই একই পরিমাপ তরঙ্গ দৈর্ঘ্য নিঃসারিত করে।তাই সকালে সুর্য থেকে যে লাল উজানি রশ্মি খোলা জায়গায় পড়ে, মাটি সেই লাল উজানি রশ্মি শুষে নেয়।যখন মাটি পচণ্ড পরিমাণে গরম হয়ে ওঠে তখন মাটি থেকে শোষিত লাল উজানি রশ্মি বিকিরিত হতে থাকে।তাই উত্তর-পূর্ব দিক্‌ খোলা রাখলে যেমন সকাল থেকে দুপুর অবধি সরাসরি লাল উজানি রশ্মি পাওয়া যায় তেমনই দুপুরের পরমাটি থেকে বিকিরিত লাল উজানি রশ্মিও মেলে।তাই সকাল থেকে সন্ধ্যে পর্যন- লাল উজানি রশ্মি পাওয়ার জন্য উত্তর-পূর্ব দিক্‌ খোলা রাখা অত্যন্ত জরুরি।

কেন বাড়ির উত্তর এবং পূর্ব দিক্‌ লম্বা গাছ না লাগিয়ে দক্ষিণ ও পশ্চিমে তা লাগানোর কথা বাস্তুশাস্ত্রে বল হয়েছে?

উত্তরঃ লম্বা গাছ মাটি থেকে বেশি পরিমাণে পানি শুষে নেয়।আর পাতকুয়ো, টিউবওয়েল বা পুকুর বাস্তুমতে উত্তর-পূর্ব অঞ্চলে করা হয়।সেই উত্তর-পূর্বদিকে লম্বা লম্বা গাছ লাগালে পাতকুয়ো, টিউবওয়েল বা পুকুর থেকে বেশি পরিমাণে পানি শুষে নেবে।আবার শরৎকালে ধীরে ধীরে গাছের থেকে শুকনো পাতা ঝরে যায়।

সেই শুকনো পাতা ব্যাক্টিরিয়া তৈরি করে।কাজেই শুকনো পাতা পাতকুয়ো বা পুকুরে পড়লে পানি দূষণের সম্ভাবনা থাকে।তা ছাড়া লম্বা লম্বা গাছ পুকুর বা পাতকুয়োয় ছায়া তৈরির কারণে সূর্যরশ্মি সরাসরি পুকুর বা পাতুয়োর পানিতে পড়তে পারে না।কিন্তু লম্বা আর ঘন গাছ দক্ষিণ ও পশ্চিম দিকে লাগালে বিকেলের সূর্যের প্রখর তাপ থেকে বাড়িঘরকে রক্ষা তো করেই সেই সঙ্গে পশ্চিম ও দক্ষিণ দিককে ঠাণ্ডাও রাখে।

সূর্যের লাল উজানি (ইনফ্রারেড) রশ্মি আসে উত্তর-পূর্ব দিক থেকে।কাজেই উত্তর-পূর্ব দিকে লম্বা ও ঘন গাছ লাগালে সূর্যর উপকারী লাল উজানি রশ্মি আসতে বাধা পায়।আর পশ্চিম ও দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে লম্বা ও ঘন গাছ লাগালে সেই গাছ যেমন সূর্যতাপ আটকে বাড়িঘর রক্ষা করে বাড়িকে সুশীতল রাখে তেমনই সূর্যের ক্ষতিকর অতিবেগুনি (আলট্রা ভায়োলেট) রশ্মিও আটকে দেয়।

মানুষ্যদেহে বিকিরনের প্রভাব কী? বাস্তুশাস্ত্রের এ বিষয়ে অভিমত কী?

উত্তরঃ বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের প্রতিটি বস্তু থেকেই যার যার নিজস্ব তরঙ্গে প্রতিনিয়ত শক্তি বিকিরণ হয়।বেবলমাত্র কঠিন, তরল , গ্যাসের থেকেই নয়, প্রতিটি অনূ, তন্তু ও কোষ তেকেও শক্তি বিকিরিত হয়।কিছু বস্তু থেকে বিকিরিত হয় ধনাত্মক শক্তি, আবার কিছু থেকে ঋণাত্মক শক্তি।যে সমস্ত বস্তু থেকে ধনাত্মক শক্তি বিকিরিত হয় সেগুলি উপকারী।আর যে সমস্ত বস্তু থেকে ঋণাত্মক শক্তি বিকিরণ হয় সেগুলি ক্ষতিকর।বস্তু থেকে বিকিরিত ক্ষতিকর শক্তিকে কেমনভাবে প্রতিহত করা যায় তারও নির্দেশ আছে বস্তুশাস্ত্রে।সেটিই বাস্তুকলা।আমাদের চারপাশে যে সমস্তু বস্তু বিরাজ করে তার মধ্যে বেশ কিছু ধনাত্মক শক্তিসম্পন্ন এবং বেশ কিছুর রয়েছে ঋণাত্মক শক্তি।আমরা আগেই বলেছি ঋণাত্মক শক্তিসম্পন্ন বস’ ক্ষতিকারক।কাজেই এই ঋণাত্মক শক্তিসম্পন্ন বস্তুগুলিকে পরিহার করে চলা উচিত।ধনাত্মক শক্তিসম্পন্ন বস্তুর উদাহরণ হল – পিতল, কাচ, চিনামাটি, সিরামিক, বেশ কিছু পাথর, সুরকি, কাঠ, গাছপালা ইত্যাদি।আর ঋণাত্মক বস্তু সকল হল লোহা, অ্যাক্রিলিক, পলিথিন, নাইলন, পিভিসি, সিন্থেটিক ভিনাইল, গ্রানাইট ইত্যাদি।এই ঋণাত্মক বস্তুসকল পরিহার করলে ভাল।আর ধনাত্মক বস্তুসকল জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই উপকারী।ঋণাত্মক শক্তি সিরোটিনিন ও হিস্টামাইন উৎপন্ন করে মানবদেহে।যার ফলে অসুস্থতা সৃষ্টি হয় এবং জীবনীশক্তি কমিয়ে দিয়ে হতাশা বাড়ায়।

বাড়ি বা ফ্ল্যাটের মূল কাঠামো অপরিবর্তিত রেখে শুধুমাত্র ধনাত্মক বস্তুসকলের ব্যবহার বাড়িয়ে এবং অভিজ্ঞ বাস্তুশাস্ত্রীর পরামর্শ অনুযায়ী চললে জীবনের সুখ-সমৃদ্ধি অক্ষুন্ন থাকে।তাই মানুষ্যদেহে বিকিরণের প্রভাব অসীম।

বাস্তুর সঙ্গে আভ্যন্তরসজ্জা বা ইন্টিরিয়র ডেকরেশনের সম্পর্ক আছে কি?

উত্তরঃ অবশ্যই।কোনও বাড়িই আভ্যন্তরসজ্জা ব্যতীত সম্পুর্ণ হয় না।সেই হিসাবে বাড়ির প্রতিটি আসবাব বাস্তুর সঙ্গে সম্পর্কিত।আসবাবপত্র বাড়ির বাস্তু প্রভাব বাড়াতে বা কমাতে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়।এ ব্যাপারটি অনেক বিস্তারিত আলোচনার বিষয়।তবু দু-একটি উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, বাড়িতে যতদুর সম্ভব কাঠের আসবাবপত্র ব্যবহার করুন।চুম্বক আকর্ষণকারী ধাতু লোহার আসবাব ব্যবহার না করাই ভাল।কারণ ম্যাগেনেটিক ফিল্ড বা চৌম্বকীয় ক্ষেত্রের ফলে ব্যবহারকারীর অবশ্যই ক্ষতি হবে।বিশেষ করে শোওয়ার খাট যেন কখনই লোহার না হয়।প্রসঙ্গত, বৃহৎসংহিতা’-তে শোওয়ার খাটের মাপ স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে।খাটের মাপ হবে দৈর্ঘ্যে ৭৫ ইঞ্চি, প্রস্থে ৩৩ ইঞ্চি এবং উচ্চতায় ২৫ ইঞ্চি।

বাড়িতে কীভাবে প্রবেশ করতে হবে সেটাও কি বাস্তুশাস্ত্রে বলা আছে?

উত্তরঃ বাস্তুশাস্ত্র অনুসারে বাড়িতে প্রবেশ করার সময় ডান দিকে ঘুরে প্রবেশ করলে শুভ হয়।একে পূর্ণবাহু প্রবেশ বলে।বাঁ দিকে ঘুরে প্রবেশ করলে সে সব বাড়িতে রোগভোগ, অশান্তি লেগেই থাকে।

আমাদের প্রাত্যহিক জীবনে ডাইনিং রুম অর্থাৎ খাওয়ার ঘর একটি উল্লেখযোগ্য স্থান।এই ডাইনিং রুম বা খাওয়ার ঘরের অবস্থান এবং কোন দিকে মুখ করে ভোজন করা উচিত, গৃহের কোন দিকে খাওয়ার ঘর করতে হবে, কর্ত্তা কোথায় বসবেন ইত্যাদি সম্পর্কে বাস্তুসম্মত মতামত কী?

উত্তরঃ বেশিরভাগ বাড়িতে রান্নাঘরেই খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়।এ ক্ষেত্রে রান্নাঘরের পশ্চিমদিকে বসে- তা টেবিল বা মেষে যাই হোক না কেন, উত্তর বা পূর্বমুখী হয়ে বসে খাওয়া ভাল।আর আলাদা খাওয়ার ঘর থাকলে তার অবস্থান নির্ভর করবে রান্নাঘরের অবস্থানের উপর।রান্নাঘর দক্ষিণ-পূর্বে হলে পূর্বের ঘর আর উত্তর-পশ্চিমে হলে পশ্চিমে খাওয়ার ঘর করা উচিত।এবারে গৃহকর্তা কীভাবে বসবেন।গৃহকর্তার বসার অবস্থান নীচের ছবির মতো হলে ভাল হয়।

চিত্রঃ

খাওয়ার ঘরের দেওয়ালের রং হবে হালকা গোলাপি।ফুল, ফল, সবজি ইত্যাদির ছবি খাওয়ার ঘরের পূর্ব বা পশ্চিমে টাঙানো যেতে পারে।উত্তর এবং পূর্বে আয়না রাখা ভাল।ডাইনিং টেবিলের আকার আয়তাকার হওয়া শ্রেষ্ঠ।অন্য আকারের টেবিল বাস্তুসম্মত নয়।

বিধিশূল কাকে বলে? শুভ বা অশুভ বিধিশূল সম্পর্কে বাস্তুশাস্ত্রে কোনও নির্দেশ আছে কি?

উত্তরঃ বিধিশূল অর্থাৎ ‘প্রতিবন্ধক’ আমরা তাকেই বলব যে ক্ষেত্রে জমি ঘেঁষে এক বা একাধিক রাস্তা এসে যেন ধাক্কা মারছে।বিধিশূল শুভ-অশুভ- দুরকমই হতে পারে।প্রধান প্রবেশদ্বারের বিধিশূল বলা যাবে যদি প্রধান প্রবেশদ্বারের সামনেই কোনও বড় গাছ, লাইটপোষ্ট, পানি বড় ট্যাঙ্ক, বিদ্যুতের লাইন ইত্যাদি থাকে।আমরা এখানে কেবলমাত্র জমির বিধিশূল সম্পর্কে আলোচনা করছি।নীচের একাধিক রেখাচিত্রের মাধ্যমে জমি এবং রাস্তার অবস্থান দেখিয়ে শুভ-অশুভর নির্দেশ করছি।

চিত্রঃ

চিত্র-১-এ জমির চারদিকে রাস্তা থাকা সর্বতোভাবে শুভ।কিন্তু চিত্র-২- এ জমির চারদিকে রাস্তা থাকলেও চারদিকে রাস্তায় অন্যান্য রাস্তা এসে যেন ঝাঁপিয়ে পড়ছে – এমন অবস্থান মোটেও শুভ নয়।চিত্র-৩ ও ৪-এ জমির উত্তর-পূর্ব দিক থেকে রাস্তা বেরিয়েছে।এমন অবস্থান শুভ।এইভাবে শুভ-অশুভর একটি তালিকা পরের পাতায় দেওয়া হল।

শুভ বিধিশূল অশুভ বিধিশূল
উত্তর-পূর্বের উত্তর দিক্‌ দক্ষিণ-পূর্বের পূর্বদিক্‌
উত্তর-পূর্বের পূর্বদিক্‌ উত্তর-পশ্চিমের উত্তরদিক্‌
দক্ষিণ-পূর্বের দক্ষিণ দিক্‌ দক্ষিণ-পশ্চিমের পশ্চিম দিক্‌
উত্তর-পশ্চিমের পশ্চিমদিক্‌ দক্ষিণ-পশ্চিমের দক্ষিণদিক্‌

অনেক মানুষেই কোণের জমি পছন্দ করেন্‌ এই জমির ওপর বাড়ি তৈরির সময়। কোন দিকে কতটা জমি ছাড়া উচিত- সে সম্পর্কে বাস্তুশাস্ত্রে সুস্পষ্ট নির্দেশ আছে অনেক ক্ষেত্রে বাড়ি তৈরির সময় জমির এক বা একাধিক কোণে এমন কিছু তৈরি করা হয়, যাতে বাধা সৃষ্টি হয়।এ সম্পর্কে বাস্তুশাস্ত্রের ব্যাখ্যা কী?

উত্তরঃ প্রথমে জমি নির্বাচন করে বাড়ি তৈরির সময় জমি উত্তর-পূর্বদিকে, দক্ষিণ-পশ্চিম দিকের তুলনায় বেশি জমি ছাড়তে হবে।কিন্তু এই নিয়ম পালন করেও চিত্র ১১ এ আমরা দেখছি উত্তর-পূর্ব কোণে শৌচাগারের অবস্থানের জন্য এটি অশুভ।চিত্র ১২-এ দেখছি বাড়ি এবং জমির দেওয়াল ঘেঁসে কোনও গ্যারাজ বা অন্য কিছু তৈরি করায় এটি নিতান্তই অশুভ কারণ হয়ে উঠছে।চিত্র ১২-এ উত্তর-পশ্চিমের কোণ কাটা অবস্থার কারণে এটি সমগ্রভাবে অশুভ।কিন্তু মূল বাড়ির দেওয়াল না ছুঁয়ে ‘খ’ আকৃতির কোনও নির্মাণ দক্ষিণ-পশ্চিমে থাকলে তা কিন’ শুভ ফলদায়ক (চিত্র-১৩)।উত্তর-পূর্ব (চিত্র-১৪) অথবা দক্ষিণ-পূর্ব (চিত্র-১৫ এবং ১৬) দিকের জমি রাস্তা অথবা অন্য কারণে কাটা বা বিঘ্নিত হলে তা মোটেই শুভ নয়।

মূল জমির লাগোয়া অন্য জমি প্রায় ক্ষেত্রেই আমরা পাই।জিজ্ঞাস্য, মূল জমির লাগোয়া কোন কোন দিকের জমি ভাল -যা সম্ভব হলে মূল জমির অংশ হিসাবে গ্রহণ করা যেতে পারে এবং কোন কোন দিকের জমি অশুভ -সে সম্পর্কে বাস'সম্মত মতামত কী?

উত্তরঃ মনে করুন মূল জমির উত্তর-পূর্ব কিছু বাড়তি জমি রয়েছে, যা ইচ্ছে করলে মূল জমি অংশ হিসাবে গ্রহণ করা যায়।চিত্র নং ১৭, ১৮ এবং ১৯ এটি শুভ।পরের ছবিগুলো সব অশুভ

বাস্তুশাস্ত্রে কি ‘পিরামিড’ সম্পর্কে অধ্যয়ন করা হয়? পিরামিড গঠনশৈলীতে শক্তির প্রতিক্রিয়া কীভাবে প্রতিফলিত হয়?

উত্তরঃ প্রথমেই বলা হয়েছে যে, বাস্তুশাস্ত্রের সম্বন্ধ স্থাপত্যবিদ্যার সঙ্গে জড়িত।আমাদের শাস্ত্র প্রণেতারা বলেছেন কীভাবে একটি সাধারণ আকৃতি অথবা কাঠামো নিজের বিভিন্ন কেন্দ্র থেকে শক্তি ও প্রকাশ ছড়ায়।এই কাঠামো একবর্গ, ত্রিভূজ ও ষড়ভুজ ইত্যাদি যে কোনও রকমেরই হতে পারে।হবে ত্রিভূজ ও তার কেন্দ্রগুলি থেকেই সব থেকে বেশি শক্তি পাওয়া যায়।এই কারণেই স্থাপত্যে ত্রিভূজাকৃতিকে শক্তির স্রোত বলে মনে করা হয়।বিভিন্ন পুরাণ শাস্ত্রে সাধারণভাবে এবং যন্ত্র বিজ্ঞানে বিশেষ করে ত্রিভূজ আকারের প্রয়োগ বিধান সম্বন্ধে বলা হয়েছে।

প্রাচীন মিশরে পিরামিড ত্রিভূজকৃতি গঠনশৈলীকে বিশেষভাবে প্রয়োগকরা হয়েছে।যে সমস্ত পিরামিড যা আজও আমরা দেখতে পাই, তার মাপ বিস্তার দৈর্ঘ্য, প্রস্থ এবং কোণ বিশাল পিরামিড বিজ্ঞানের ওপর ভিত্তি করে আছে।এগুলিকে কুফুও বলা হয়ে থাকে।পিরামিড ভিতরে একটা শক্তিক্ষেত্র তৈরি হয়।এই শক্তিক্ষেত্র তৈরি হয় এই সব কারণে।

১।
চারটি ত্রিভূজাকার দিক শক্তির প্রসার ঘটায়।
২।
২। বর্গাকার ভিত শক্তির প্রসার ঘটায়।
৩।
সূর্যের রশ্মির যে প্রকাশ পিরামিডের পাদদেশে গিয়ে পড়ে তা এপার-ওপারে চলে যেতে সক্ষম হয়।এর একমাত্র কারণ হল পিরামিডের অসামান্য নির্মাণশৈলী।
৪।
পৃথিরীর সমতুলে শক্তির কেন্দ্র আছে।
৫।
পৃথিরীর সমতলে চৌম্বকীয় ক্ষেত্র আছে।

এই পাঁচটি শক্তিক্ষেত্র পরস্পর মিলিত হয়ে এক নতুন ও বেশি শক্তিশালী ক্ষেত্র গড়ে তোলে।এ সম্পর্কে অভিজ্ঞতা থেকেও অনেক কিছু জানা গিয়েছে।যেমন দাড়ি কামানোর ব্লেড পিরামিডের তলায় রেখে দিলে তার ধার অনেক বেশি দিন থাকে।পিরামিডের নীচে খাদ্যদ্রব্য রেখে দিলে তা অনেক বেশি দিন টাটকা থাকে।ব্যাটারির সেল পিরামিডের সাহায্যে আগের থেকে সজীব হয়ে যায়।পিরামিডের মধ্যে রাখা পানি রোগীদের চিকিৎসার পক্ষে ভাল।

বাস্তুশাস্ত্রে বিভিন্ন আকার যেমন, ত্রিভূজ, চতুর্ভূজ, পঞ্চভূজ, ষষ্টভূজ, অষ্টভূজ ইত্যাদি সম্পর্কে বলা হযেছে।বিভিন্ন আকারের উর্জার স্রোত পরীক্ষা করে দেখা গেছে যে, ত্রিভূজের মধ্যেই নিহিত রয়েছে সর্বাধিক উর্জার স্রোত।এই কারণেই পিরামিডের ভিতর লক্ষ লক্ষ বৎসর পুরানো মমি রাখা হয়েছে।আর পিরামিড আসলে ত্রিভূজাকার বলে পিরামিডের মধ্যে এত উর্জার স্রোত দেখা যায়।

পিরামিড তৈরির সহজ পদ্ধতি নীচে দেওয়া হল।

চিত্রঃ

পিরামিড নির্মাণে পিতল, তন্তু, কাঠ, প্লাইউড, ইট ইত্যাদি ব্যবহার করা যেতে পারে।কিন্তু লোহা বা স্টিল ধাতু নৈব নৈব চ।আর সর্বদা উত্তর-দক্ষিণে সমান্তরাল রাখতে হবে তবে বৈদ্যুতিক তার ও টিভির তার থেকে দূরে রাখা উচিত।

ভারতবর্ষে এমন কোনও শহর আছে কি বা সম্পূর্ণ “বাস্তুশাস্ত্র” মেনে নির্মিত হয়েছে?

উত্তরঃ হ্যাঁ, ভারতে বাস্তু শাস্ত্র সম্মত একমাত্র শহর হল “জয়পুর”।এটি তৈরি ১৭২৭ সালে।প্রখ্যাত বাঙালি গণিত, জ্যোতিষ, পূর্তবিদ্যা ও রাজনীতি বিশারদ বিদ্যাধর ভট্টাচার্যর নকশা অনুসারে শহরটি তৈরি হয়।প্রখ্যাত জ্যোতিষর্বিদ রাজা দ্বিতীয় জয় সিংহের নামানুসারে জয়পুরের নামকরণ।পৌরাণিক ভারতীয় “শিল্পশাস্ত্র” অনুযায়ী শহরটি সাতটি আয়তাকারে বিভক্ত।হাওয়া মহল, যন্তর মন্তর, ঈশ্বরলাঠ ইত্যাদি প্রাসাদ প্রায় ২০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে সগৌরবে দাঁড়িয়ে ।সমস্ত শহর শক্ত পাঁচিল দিয়ে ঘেরা এবং তাতে রয়েছে সাতটি ফটক বা গেট।

বাড়ি তৈরির পক্ষে আদর্শ লম্বা, চওড়া এবং উচ্চতা ঠিক কেমন এবং কতটা হওয়া উচিত? বাস্তুশাস্ত্রে এরকম কি কোনও নির্দেশ আছে?

উত্তরঃ বাস্তুশাস্ত্র অনুযায়ী চৌকো জমিই বাড়ি তৈরির পক্ষে সবচেয়ে আদর্শ অর্থাৎ যা লম্বা ও চওড়ায় সমান।কিন্তু এরকম জমি বাড়ি তৈরির জন্য পাওয়া খুবই ভাগ্যের ব্যাপার।এরপরই আছে আয়তাকার জমির স্থান।আয়তাকার জমিও বাস্তর জন্যে খুবই উপযুক্ত।উদাহরণস্বরূপ ২৫ ফুট লম্বা হলে চওড়া হওয়া উচিত ২০ ফুট।সাধারণভাবে এই মাপ লম্বায় ৩৭.৫০ ফুট হলে চওড়ায় ৩০ ফুট, লম্বা ১২৫ ফুট হলে ১০০ ফুট চওড়া হবে।

  • উচ্চতা সাধারণত বসবাদের বাড়ির পক্ষে যতটা, চওড়া তার অনুরূপ হওয়া উচিত, কিন্তু রাজপ্রাসাদ ও সরকারি অফিসবাড়ি এই নিয়মের মধ্যে পড়ে না।তার জন্য আলাদা নিয়ম প্রযোজ্য।প্রাচীন স্থাপত্যশাস্ত্রে আমরা এগারোতলা উচ্চতাবিশিষ্ট বাড়ির বর্ণনা পাই।স্থির এবং অদৃশ্য ভাগ্যকে কীভাবে বাস্তুশাস্ত্র দ্বারা নিয়ন্ত্রণ করে ভবিষ্যৎ সংক্রান্ত যে-কোনও মঙ্গলামঙ্গল আশঙ্কাকে ভীতিপ্রদ হয়ে ওঠা থেকে নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে জীবনে উন্নতি এবং সমৃদ্ধিকে সুপ্রতিষ্ঠিত করা যায়?
  • মানবজীবন দুভাগে বিভক্ত।এর মধ্যে অর্ধক হচ্ছে চেষ্টা বা কর্ম এবং বাকি অর্ধেক হচ্ছে ভাগ্য, অর্থাৎ ভাগ্য + চেষ্টা / কর্ম = ফল।এই প্রথমাংশ সম্পূর্ণ অধরা ও অদৃশ্য এবং স্থির।অপরপক্ষে কর্মের পুরোটাই দৃশ্যমান এবং জাতকের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে।যেমন বাস্তু বা আবাসভুমি এবং কর্মস্থান।বাস’র পুরোটাই দৃশ্যমান এবং যা জাতকের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রনে।ভাগ্য সংক্রান্ত কোনও গোলযোগ থাকলে তা বাস’দ্বারা নিয়ন্ত্রণ করে আংশিকভাবে ঠিক মতো দিকে চালনা করা যায়।
  • জন্মকুণ্ডলীর বিভিন্ন দোষ জ্যোতিষ ও বাস্তুশাস্ত্র মতে বিচার করে সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নিলে বর্তমান ও আগামী জীবন সুসংবদ্ধ ও সুখময় হয়ে ওঠে।
  • বাস্তুর পুরোটাই দৃশ্যমান আর তা সম্পূর্ণরূপে নিয়ন্ত্রণ সাপেক্ষ।যেমন বাড়ির প্রবেশপথ, শয়নঘর, প্রার্থনাকক্ষ, পাকশালা, অভ্যর্থনা কক্ষ, ব্রহ্মস্থান, সিঁড়ি ইত্যাদি সমস্ত কিছু যদি বাস্তুশাস্ত্র অনুযায়ী পরিকল্পনা করে তৈরি করা যায় তবে তা অদৃশ্য ভাগ্যচক্রকে নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে এবং বাস্তুর শুভফলের দ্বারা ভাগ্যচক্রকে নিয়ন্ত্রন করে মানবজীবনের শুভময়তাকে বর্ধিত করে।
  • একটি সাধারণ উদাহরণের সাহায্যে ব্যাপারটাকে বুঝানো যাক্‌ যেমন, মানব জীবনের দুভাগ : যথা, ভাগ্য ও কর্ম। শতকরা ৫০ শতাংশ করে ভাগ করা গেলে ভাগ্যফলের যে খারাপ অংশ তার শতকরা ২৫ থেকে ৩০ শতাংশকে বাস্তুশাস্ত্র দ্বারা নিয়ন্ত্রিত করা যায়।তবেই ভাগ্য অনেকটা সুখময় হয়ে ওঠে।বাস্তুদোষ যদি সম্পূর্ণভাবে সংশোধন করা যায় তবে বাস্তুর ৫০ শতাংশ পুরোটাই লাভ করা যায়।বাকি ৫০ শতাংশের মধ্যে অন্তত যদি ২৫ শতাংশকেও এর দ্বারা প্রভাবিত করা যায় জাতক তবে শতকরা ৭৫ শতাংশ শুভফল অর্জন করে।
  • এর দ্বারা বোঝা যাচ্ছে সাধারণ মানুষ যদি একটু খেয়াল করে তবে বাস্তু সংস্কার দ্বারা তার নিজের এবং পরিবারের সবাইয়ের ভাগ্যকে পরিচ্ছন্নভাবে গড়ে তুলতে পারে।

মনে করুন কারও একটি বাড়ি আছে যা তিনি ভাড়া দিতে চান, তাতে দুটি সমান সুবিধাযুক্ত ফ্ল্যাট আছে।তার মধ্যে কোনটি থাকার আর কোনটি ভাড়া দেওয়ার জন্য আদর্শ তা কীভাবে ঠিক কর যাবে? বাস্তুশাস্ত্রে এ জন্যে কী নির্দেশ আছে?

উত্তরঃ তৈরি বাড়ি থাকার ও ভাড়া দেওয়ার সময় খেয়াল রাখতে হবে যেন বাড়ির মালিক থাকার জন্যে বাড়ির দক্ষিণ-পশ্চিম অংশকে বেছে নেন এবং বাকি অংশটি ভাড়া দেওয়ার জন্য নির্দিষ্ট করেন।বাড়িটিতে যদি একাধিক তলা থাকে তবে বাড়ির মালিক হয় একতলা না হয় সর্ব্বোচ্চ তলা বেছে নেবেন তাঁর থাকার জন্যে।বাকি অংশকে ভাড়া দেওয়ার জন্য নির্দিষ্ট করতে পারেন।দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে কর্তার শোওয়ার ঘর হওয়া উচিত, কারণ এই দিকে থাকলে কর্তার দাপট সারা বাড়ির উপর কায়েম থাকে।

ধর্মশাস্ত্রে শয়নের সম্বন্ধে কোনও নির্দিষ্ট বিধি কি বাস্তুশাস্ত্রে বলা আছে?

উত্তরঃ গৃহসথের নিরাপদ শয়নবিধির সম্বন্ধে বলা হয়েছে। যেমন- ধান্য, গো, গুরু, অগ্নি ও মসজিদে কখনও শয়ন করা উচিত নয়। শোওয়ার সময় মাথা উত্তরদিক করে বা উলঙ্গ হয়েও শয়ন না করা উচিত। এমনকি হাত ও পা ভেজা বা পানিসিক্ত অবস্থাতেও শয়ন নিষিদ্ধ।

শঙ্কু কথার মানে কী?

শঙ্কু হল সূর্যের ছায়া মাপার যন্ত্র।এ এমন একটি সহজ যন্ত্র যার সাহায্যে জমিতে সূর্যের উদয় এবং অস্তের কিরণরেখা ধরে বাকি দিকগুলি যথার্থভাবে চিহ্নিত করা যায়।শঙ্কুর মাপ হল দ্বাদশ অঙ্গুলির সমান।ছায়া মাপতে হলে শঙ্কুকে বসাতে হবে জমির কেন্দ্রস্থলে।সম্ভব না হলে অন্য জায়গায় বসানো চলবে।নির্দিষ্ট মাপযুক্ত শঙ্কু বিভিন্ন দ্রব্যের তৈরি হয়।যেমন- হাতির দাঁত, চন্দন কাঠ এবং ভাল জাতের সাধারণ কাঠ।বাড়ি তৈরি এবং জমির চারদিকে দেওয়াল দেওয়ার সময় শঙ্কুর সাহায্যে যথার্থ দিক্‌গুলি চিহ্নিত করা হয়। আদর্শ শ্কুর মাপ এবং বসানোর পদ্ধতি নীচের ছবিতে দেখানো হলো।

বাস্তুশাস্ত্রে কি সন্তানহীন দম্পতির সাফল্যের জন্য কোনও নির্দেশ আছে?

উত্তরঃ সুবাস্তুতে নরনারীর বিবাহিত জীবনকে আনন্দময় হয়ে উঠতে নানা রকম ভাবে সাহায্য করে।নিঃসন্তান দম্পতি বাস্তুর নিয়মাবলি ঠিকভাবে মেনে চললে তাঁদের মনের ইচ্ছা পূরণ হতে পারে।কিন্তু কিছু কিছু নির্দেশ সম্বন্ধে নিষেধাত্মক কারণগুলি জানানো হল।যেমন, শল্যদোষযুক্ত ভূমি অথবা দিক্‌মূল জমির উপর বাড়ি এবং জমির পশ্চিম ও নৈর্ঋত জলের কুয়ো বা ট্যাঙ্ক, প্রবেশদ্বারের ত্রুটিপূর্ণ নির্মাণ, অপূর্ণ গৃহ প্রবেশ ও উত্তর-পূর্ব দিকের ঘরে বাস করা।বাস্তুমতে সন্তানলাভে সাহায্যকারক নিয়মগুলি হল দম্পতির দক্ষিণ ঘরে বাস এবং প্রবেশদ্বারের অবস্থান যেন সুগৃব, প্রজন্ম, কুসুমদন্তত ও মুখ প্রভৃতি স্থানে থাকে।