fbpx

বাড়ি তৈরী ও বিভিন্ন ঘর

বিভিন্ন প্রাচীন গ্রন্থানুসারে ষোলটি কক্ষ ও মাঝখানে উঠোনযুক্ত বাড়িকে উত্তম মনে করা হয়।নামাজের বা ইবাদতের কক্ষ হবে।পূর্বদিকে গোসলখানা ও পানিধার হবে।অগ্নিকোণে রান্নাঘর, বৈদুতিক সাজসরঞ্জাম রাখার ঘর করতে হবে।উত্তরে দামি বা বহুমূল্য জিনিসপত্র রাখার ভাণ্ডার ও ধনসম্পদ রাখা যেতে পারে।অগ্নিকোণে ও পূর্বদিকের মাঝখানে ঘি, তেল, দধিমন্হন ঘর হওয়া উচিত।এই ধরণের বাড়িকে উত্তম বলা হয়েছে।

পশ্চিম দিকে খাওয়ার ঘর হবে।পশ্চিম ও নৈর্ঋত দিকের মাঝখানে পড়ার ঘর অথবা অতিথি কক্ষ করা উচিত।বায়ব্য দিকে পশুশালা, রথ বা বাহন রাখার জায়গা করতে হবে।পশ্চিম ও উত্তরের মধ্যে রোদনগৃহ বা শোককক্ষ তৈরি করা যেতে পারে।নৈর্ঋত দিকে পাদুকা রাখতে হবে।নৈর্ঋত ও পশ্চিম দিকের মাঝখানে শৌচাগার নির্মাণ করা যেতে পারে।পশ্চিম দিকে ছোট ছেলেমেয়েদের থাকার ঘর করা উচিত।বায়ব্য দিকে কুমারী মেয়েদের থাকার ব্যবস্থ থাকবে।কারণ এই রকম ঘরে কুমারী মেয়ে থাকলে তার বিবাহে বিলম্ব দোষ কেটে যাবে।

বাস্তু দিক্‌দর্শন

চিত্র:

আধুনিক যুগে জমির অভাব, বড় বাড়ি তৈরি করাও প্রায় অসম্ভব।তবে ষোল ঘরের বাড়ি আজকের দিনে কল্পনা করাও বৃথা।ষোলকক্ষযুক্ত বাড়ি সম্ভব না হলে এগারো কামরা, নয় কামরা, সাত কামরা, পাঁচ কামরাযুক্ত বাড়ি করা যেতে পারে।তাও যদি সম্ভব না হয় তা হলে অন্ততপক্ষে তিন কামরার বাড়িও ভাল।এই প্রেক্ষিতে আধুনিক প্রয়োজনের কথা মনে রেখে আদর্শ বাড়ির জন্য বিভিন্ন অনুকুল দিক্‌ ও অন্যান্য পরামর্শের কথা বলা হয়েছে।পরিস্থিতি ও প্রয়োজন অনুসারে এই সব দিক্‌ ও পরামর্শ অনুসরণ করে অবশ্যই লাভবান হওয়া যায়।

বাড়ি তৈরি : জমির উত্তর-পূর্ব কোণে ভূমির দোষ উদ্ধার করা উচিত।শাস্ত্রমতে দোষ বা ক্রুটি সম্পন্ন করার পরই প্রথম খনন শুরু করা কর্তব্য।চারদিকের জমিকে প্রথমে সমান ভাবে চৌরস করে নিতে হবে।এরপর জমির ঢাল রাখতে হবে উত্তর-পূর্বে।ভিত্তিপ্রস্তর চান্দ্রমাস অনুসারে উপযুক্ত দিকে বিশেষ অনুষ্ঠান পূর্বক স্থাপন করতে হবে।সে সম্বন্ধে অভিজ্ঞ জ্যোতিষ ও বাস্তুশাস্ত্রবিদের মতানুসরণ করা উচিত।নির্মাণ কাজ প্রথমে দক্ষিণ-পূর্ব দিক্‌ থেকে শুরু করতে হবে।পূর্ব এবং উত্তরে বেশি জায়গা ছাড় দিতে হবে।দক্ষিণ এবং পশ্চিম সীমানার পাঁচিল উত্তর ও পূর্ব দিকের চেয়ে উঁচু আর মোটা করতে হবে।মূল বাড়িটি রাস্তার তল থেকে কমপক্ষে দু ফুট উঁচু করে করা উচিত।

মনে রাখা দরকার যে প্রথম খনন করার সময় শুভ মুহূর্ত অনুসরণ করা অবশ্য কর্তব্য।পর্যায়ক্রমে সর্বপ্রথম উত্তর-পূর্ব, তারপর উত্তর-পশ্চিম, দক্ষিণ-পূর্ব এবং পরিশেষে দক্ষিণ-পশ্চিম অংশ এইভাবে খনন করা উচিত।

ভিত্তিপ্রস্তর : বাস্তু বিশেষজ্ঞ ও জ্যোতিষীর পরামর্শ অনুযায়ী শুভ ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা উচিত।প্রথম খননের ঠিক বিপরীত নিয়মে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করতে হবে।যথা: পর্যায়ক্রমে দক্ষিণ-পশ্চিম, দক্ষিণ-পূর্ব, উত্তর-পশ্চিম ও পরিশেষে উত্তর-পূর্ব।

সীমানা প্রাচীর : বাড়ির চারদিকে সীমানা প্রাচীর হওয়া বাঞ্ছনীয়।সীমানা প্রাচীর এবং মূখ্য বাড়ির মাঝখানে যেন ছাড় থাকে।সীমানা প্রাচীরের পশ্চিম দিকের দেওয়াল পূর্ব দিকের দেওয়ালের চেয়ে যেন বেশি উঁচু থাকে।যদি দক্ষিণ এবং পশ্চিমের দেওয়াল উঁচু করা সম্ভব না হয় তবে যেন দেওয়ালটিকে তুলনামূলকভাবে একটু মোটা করে তৈরি করা হয়।

সীমানা প্রাচীরের দ্বার : সীমানা প্রাচীরের দরজা নির্ভর করছে জমিটি কোন মূখী তার ওপরে।সীমানা প্রাচীরের দরজা কীভাবে তৈরি করতে হবে সে সম্বন্ধেও প্রামাণিক সূত্রগুলি প্রাচীন বাস’শাস্ত্রে বলা আছে।নীচে একটি তালিকার সাহায্যে এ বিষয়ে জানানো হল।
পূর্বমুখী জমি- উত্তর-পূর্বদিকের পূর্বে করতে হবে।
পশ্চিম মুখী জমি – উত্তর-পশ্চিমের পশ্চিম দিকে করতে হবে।
উত্তরমূখী জমি- উত্তর-পূর্বের উত্তর দিকে।
দক্ষিণমূখী জমি- দক্ষিণ-পূর্বের দক্ষিণ দিকে।
সীমানা প্রাচীরের দরজা যে দিকগুলিতে করা কোনও মতেই উচিত নয় তারও একটি তালিকা দেওয়া হল।
দক্ষিণ-পূর্ব দিকের পূর্ব দিকে।
দক্ষিণ-পশ্চিম দিকের পশ্চিম দিকে।
উত্তর-পশ্চিম দিকের উত্তর দিকে।
দক্ষিণ দিকের মাঝখানে।
গ্যারেজ : গ্যারেজ হওয়া উচিত দক্ষিণ-পূর্ব বা উত্তর-পশ্চিম অঞ্চলে।

ব্রহ্মস্থান : জমির মাঝখানে অর্থাৎ একেবারে মধ্যস্থলে কোনও রকমের ভারী নির্মাণ কর্ম বাঞ্ছনীয় নয়।যেমন বিম কলাম, পিলার, দেওয়াল ইত্যাদি যেন জমির মাঝখানে না থাকে।একই রকমভাবে কোনও ঘরের মাঝখানে কোন রকমের ভারী কিছু বসানো বাঞ্ছনীয় নয়।কারণ মধ্যস’লটি হল ব্রহ্মস্থান।

বারান্দা : উত্তর ও পূর্ব দিকে করতে হবে বারান্দা।বারান্দার ছাদের স্তর বাড়ির ছাদের স্তরের এক সমান যেন না হয়।বারান্দার উত্তর-পশ্চিম দিকে জুতো রাখবার জায়গা করা যেতে পারে।

টেরাস : বাড়ির উত্তর বা পূর্ব অংশে টেরাস নির্মাণ করতে হবে।

নলকূপ ও সেপটিক ট্যাঙ্ক : নলকুপ, কুয়ো ইত্যাদি উত্তর-পূর্ব দিকে তৈরি করতে হবে।উত্তর-পূর্ব দিকের কোণসূত্রের উপর যেন নলকুপ বসানো না হয়।সেপটিক ট্যাঙ্ক দক্ষিণ-পূর্ব বা উত্তর-পশ্চিমে করা যেতে পারে।এটিও যেন কোণসূত্রের উপর না বসে।

ওভারহেড ট্যাঙ্ক : ওভারহেড ট্যাঙ্ক যেন দক্ষিণ-পশ্চিম দিকের পশ্চিমে হয়।

আউটহাউস : উত্তর বা পশ্চিম দিকে সীমানা প্রাচীরের দেওয়াল স্পর্শ না করে আউটহাউস তৈরি করতে হবে।আউটহাউসের উচ্চতা প্রধান দেওয়ালের উচ্চতার চেয়ে কম হওয়া বাঞ্ছনীয়।

বাইরে যাওয়ার দরজা : প্রধান দরজার চেয়ে ছোট আকারে অন্য দিকে যাওয়ার দরজা তৈরি করা উচিত।এই দরজার উচ্চতা প্রধান দরজার মতো রাখা যাবে, কিন’ চওড়ায় দরজা যেন তুলনায় ছোট হয়।

খাওয়ার ঘর : খাওয়ার ঘরের অবস্থান নির্ভর করছে রান্নাঘরের অবস্থানের উপর।আদর্শ রান্নাঘর হিসাবে যদি দক্ষিণ-পূর্বে রান্নাঘরের অবস্থান হয়, তবে পূর্বদিকে খাওয়ার ঘর করা উচিত।এবং যদি উত্তর-পশ্চিমে রান্নাঘর হয় তবে পশ্চিম দিকে খাওয়ার ঘর করা উচিত।খাওয়ার টেবিল অবশ্যই আয়তাকার হওয়া উচিত।গোল বা ছয় কোণযুক্ত টেবিল না হওয়াই বাঞ্ছণীয়।খাওয়ার ঘরের দক্ষিণ-পূর্বে বা উত্তর-পশ্চিমে রেফ্রিজারেটর রাখা উচিত এবং উত্তর-পূর্বে খাওয়ার পানি, পানির ফিল্টার ও বেসিন রাখতে হবে।

বসবার ঘর : বাড়ির এবং অতিথিদের বসবার ঘর হবে পূর্ব বা উত্তর-পশ্চিম দিকে।বাড়ির কর্তা পূর্ব বা উত্তর দিকে চেয়ে অতিথিকে আপ্যায়ন করবেন।বসবার জায়গাগুলি এমনভাবে সাজাতে হবে যাতে অতিথি পশ্চিম বা দক্ষিণ দিকে তাকিয়ে কথা বলেন এবং বাড়ির কর্তা পশ্চিম বা দক্ষিণ দিকে থাকবেন।এতে বাড়ির কর্তা এবং অতিথি উভয়ের পক্ষে শুভ।

পড়ার ঘর : উত্তর বা পশ্চিম দিকের ঘরে পড়ার ব্যবস্থা করা যেতে পারে।কিন’ পড়বার সময় অবশ্যই পূর্ব বা উত্তর দিকে তাকিয়ে পড়াশুনা করা উচিত।পড়বার টেবিলের ঢাকা বা টেবিল ক্লথ যদি হালকা সবুজ রঙের হয় তবে পড়াশুনায় মনোনিবেশ করতে সাহায্য করে।মনোবিজ্ঞানীদের তথ্য থেকে এটা প্রমাণিত।পড়ার ঘরের দরজা উত্তর-পূর্ব দিকে হলে ভাল হয়।

কর্তার শোওয়ার ঘর : কর্তার শোওয়ার ঘর হবে দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে।কর্তার শোওয়ার খাট থাকবে দেওয়াল থেকে অন্তত তিন ইঞ্চি দূরে।কর্তার শোওয়ার অবস্থা হবে মাথা দক্ষিণ দিকে এবং পা উত্তর দিকে, কোনও মতেই মাথা উত্তর দিকে থাকবে না।তার বিজ্ঞানসম্মত কারণ হচ্ছে মানুষের মাথা দেহের অন্যান্য অংশের চেয়ে ভারী।উত্তর দিকে মাথা রেখে ঘুমোলে নানা রকম রোগ-ব্যাধিতে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।কারণ হচ্ছে উত্তর মেরু এবং দক্ষিণ মেরু শরীরের উপর প্রভাব সৃষ্টি করে।ঘরের সংলগ্ন শৌচাগার উত্তর-পশ্চিম অথবা দক্ষিণ-পূর্বে করতে হবে।ওই ঘরের দরজা উত্তর বা পূর্বে রাখা উচিত।প্রধান আলমারি ঘরের দক্ষিণ-পশ্চিম খাটের পাশে এমনভাবে রাখতে হবে যাতে আলমারির মুখ থাকে উত্তর দিকে।ওই আলমারিতে গৃহকর্তা তাঁর মুল্যবান কাগজ ও দলিলপত্র এবং টাকা-পয়সা রাখবেন।কারণ এই উত্তর দিক্‌ই হচ্ছে বুধ গ্রহের দিক্‌”।দক্ষিণ-পশ্চিমে ভারী আলমারি রাখা সম্ভব না হলে কর্তার ঘরের উত্তরে ছোট আলমারিতে টাকা-পয়সারাখাযেতেপারে।
নিচের চিত্রের মাধ্যমে এটা পরিস্কার করে দেখানো হলো।

চিত্রঃ

ছেলের শোওয়ার ঘর : ছেলে যদি বিবাহিত হয় তা হলে তার শোওয়ার ঘরে অবস্থান হবে বাড়ির দক্ষিণ-পূর্বে।এটা যেহেতু আগ্নেয়-কোণ, সেহেতু বিবাহিত জীবনযাপনের পক্ষে সুখকর।ছেলে যদি অবিবাহিত হয় বা ছাত্রাবস্থায় থাকে তা হলে তাকে পূর্বে অথবা উত্তরের ঘরে শোওয়ার ব্যবসথা করে দিতে হবে।বিদ্যার্থীর মাথা পূর্ব, দক্ষিণ দিকে রেখে ঘুমানো শাস্ত্রসম্মত।

কন্যার শোওয়ার ঘর : কন্যার শোওয়ার ঘর হবে উত্তর-পশ্চিম দিকে কারণ জ্যোতিষ মতে এটি চন্দ্রের স্থান এবং সঙ্গীত ও কলার পক্ষে শুভ।

কিশোরের শোওয়ার ঘর : কিশোরদের শোওয়ার ঘর হবে পশ্চিম দিকে।শোওয়ার খাটকে ঘরের দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে রাখতে হবে।কিশোরদের মাথা পূর্ব, দক্ষিণ দিকে রেখে শোওয়া চলে।শোওয়ার খাট যেন দেওয়ালকে স্পর্শ না করে।

নামাজঘর : নামাজ ঘরের অবস্থান বাড়ির উত্তর-পূর্ব দিকে হওয়া অবশ্যই বাঞ্ছনীয়।এটা জ্যোতিষমতে বৃহস্পতির সথান এবং বৈজ্ঞানিক মতে এই দিক্‌ ধনাত্মক শক্তির প্রাচুর্যে ভরা।এই কারণে, ইবাদতের জন্য এই দিক্‌টি উৎকৃষ্ট স্থান।বিদ্যার্থীরাও এই দিক্‌কার ঘর ব্যবহার করতে পারে এবং যোগব্যায়াম বা সাধনা করার পক্ষে এই দিক্‌ উৎকৃষ্ট।যে সমস্ত মালিকানাযুক্ত ফ্ল্যাট বাড়িতে উত্তর-পূর্ব দিকে নামাজ ঘর নির্মাণ করার উপায় না থাকে তবে সেই সব স্থলে “ব্রহ্মস্থানে” ছোট করে নামাজ ঘর নির্মাণ করা যেতে পারে।(আলাদা অধ্যায়ে “ব্রহ্মস্থান” সম্বন্ধে বিশদ আলোচনা করা হয়েছে।)

অতিথিদের ঘর : অতিথিদের থাকার ঘরের অবস্থান হবে বাড়ির উত্তর-পশ্চিম দিকে।
অসুস্থ্যদের ঘর : অসুস্থ্য ব্যক্তির ঘরের অবস্থান উত্তর-পূর্ব দিকে ভাল হয়।এতে সে তাড়াতাড়ি সুস্থ্য হয়ে উঠবে এবং সুস্বাস্থ্য লাভ করবে।

শোকাতুর ঘটনা ঘটলে : মৃত ব্যক্তির জন্য বাড়ির পশ্চিম দিকের ঘর ব্যবস’া করতে হবে এবং মৃত ব্যক্তির ক্রিয়াকার্যাদি পশ্চিম দিকে করতে হবে, বিশেষত উঠোনে।

আঁতুড়ঘর : আগেকার দিনে বাড়ির মধ্যেই একটি পৃথক ঘরে শিশুর জন্ম হত।শিশু জন্মের আগে থেকেই একটি নির্দিষ্ট ঘরকে আঁতুড়ঘর ঠিক করে তাতে সন্তানসম্ভবা মহিলাকে রাখা হত।এখনও আমাদের দেশে পল্লি অঞ্চলে বাড়ির আঁতুড়ঘরেই শিশুরা ভূমিষ্ঠ হয়ে থাকে।তবে এই ব্যবস্থা দ্রুত পালটে যাচ্ছে।এখন শহরতলিতেও হাসপাতাল বা নার্সিং হোম অথবা মেটারনিটি হোমে শিশুদের জন্ম হয়।এখনকার ফ্ল্যাটবাড়ির সংস্কৃতিতে পৃথক আঁতুড়ঘর করার কথা ভাবাও অসম্ভব।তবে হাসপাতাল ও নাসিং হোম প্রভৃতির আঁতুড়ঘর উত্তর-পূর্বদিকে হলে মা-শিশু উভয়ের পক্ষেই ভাল।শিশুর ভূমিষ্ঠ হওয়ার স্থান উত্তর-পূর্ব দিকে হওয়া উচিত।এতে শিশুর জন্ম হয় নির্ঝঞ্ঝাটে।ফ্ল্যাট বা বাড়িতে গর্ভবতী মহিলাদের উত্তর-পূর্ব দিকের ঘরে থাকার ব্যবস’া করা ভাল।সন্তানসম্ভবা মায়েদের পক্ষে এ ধরণের ঘরে থাকা সব দিক্‌ থেকে ভাল।যদি কোনও ফ্ল্যাট বা বাড়িতে উত্তর-পূর্ব দিকের ঘরে ব্যবস্থা না হয় তা হলে অন্ততপক্ষে উত্তর-পশ্চিম দিকের কোনও ঘর হলেও চলবে।

মেজেনাইন ফ্লোর : যদি মেজেনাইন-এর প্রয়োজন হয় তবে তা দক্ষিণ দিকে করা যেতে পারে।

বেসমেন্ট : যদি করতে হয়ে তবে বেসমেন্ট উত্তর-পূর্ব দিকে করা যেতে পারে।দক্ষিণ বা পশ্চিম দিকে কোনও মতেই হবে না।

বিবিধ : প্রত্যেকটি ঘরের মাঝখানে ভারী কোনও কিছু জিনিস রাখা যাবে না।কেবল খাওয়ার ঘরে খাওয়ার টেবিল রাখা যেতে পারে।আলমারি, দেওয়ালের র‌্যাক, আলনা ইত্যাদি ভারী জিনিসপত্র ঘরের দক্ষিণ, পশ্চিম অথবা দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে রাখতে হবে।
দ্বার দু প্রকারের – সব্যদ্বার ও অপসব্যদ্বার।বাইরের দরজা ভিতরে থেকে প্রবেশ করার সময় ডানদিকে ঘুরলে সেই দ্বারকে বলে সব্য দ্বার।শাস্ত্রীয় মতে শুভ সব্যদ্বার।ফলে সুখ, ধন্যধান্য ও সন্তানাদি বৃদ্ধি।আবার যদি বাইরের দরজা থেকে ভিতরে প্রবেশের সময় দরজা বাঁ দিকে পড়ে তবে সেটি হল অপসব্যদ্বার।এটি অশুভ।এর ফলে অর্থহানি, বন্ধু-বান্ধব হানি, রোগের প্রকোপ দেখা দেবে।

চিত্রঃ

যদি বাইরের দরজা এবং ভিতরের দরজা একই দিকে থাকে তবে সেটিকে বলে উৎসঙ্গ দ্বার।আবার বাইরের দরজা যদি ভিতরের দরজার বিপরীতে থাকে এবং প্রবেশ করার সময় পিছন দিক্‌ দিয়ে প্রবেশ করতে হয় তবে সেটি হবে পৃষ্ঠভঙ্গ দ্বার দিয়ে প্রবেশ। এরল অপসব্য দ্বারের মতোই হবে।

দ্বার দু প্রকারের – সব্যদ্বার ও অপসব্যদ্বার।বাইরের দরজা ভিতরে থেকে প্রবেশ করার সময় ডানদিকে ঘুরলে সেই দ্বারকে বলে সব্য দ্বার।শাস্ত্রীয় মতে শুভ সব্যদ্বার।ফলে সুখ, ধন্যধান্য ও সন্তানাদি বৃদ্ধি।আবার যদি বাইরের দরজা থেকে ভিতরে প্রবেশের সময় দরজা বাঁ দিকে পড়ে তবে সেটি হল অপসব্যদ্বার।এটি অশুভ।এর ফলে অর্থহানি, বন্ধু-বান্ধব হানি, রোগের প্রকোপ দেখা দেবে।

চিত্রঃ

যদি বাইরের দরজা এবং ভিতরের দরজা একই দিকে থাকে তবে সেটিকে বলে উৎসঙ্গ দ্বার।আবার বাইরের দরজা যদি ভিতরের দরজার বিপরীতে থাকে এবং প্রবেশ করার সময় পিছন দিক্‌ দিয়ে প্রবেশ করতে হয় তবে সেটি হবে পৃষ্ঠভঙ্গ দ্বার দিয়ে প্রবেশ।এর ফল অপসব্য দ্বারের মতোই হবে।

প্রধান প্রবেশদ্বার সম্বন্ধে কিছু বিশেষ নির্দেশের কথা দেওয়া হল।
ভবনের মাঝামাঝি স্থানে মুখ্যদ্বার না করাই ভাল
মুখ্যদ্বারে যেন দুটি পাল্লা থাকে।ভেতরের দরজা এক পাল্লার করা যেতে পারে।
মুখ্যদ্বার সব সময় ভিতরের দিক থেকে খোলা উচিত।
প্রবেশ দ্বারের মুখোমুখি কোন দেওয়াল থাকা উচিত নয়।
মুখ্যদ্বার স্ল্যান্টিং বা অর্ধচন্দ্রাকার হওয়া উচিত নয়।দরজা হবে চৌকো।ত্রিকোণ, বৃত্তাকার বা অসম আকৃতির দরজা কিছুতেই করা উচিত নয়।
প্রবেশদ্বারের মাঝে গোবরাট অর্থাৎ চৌকাঠ যেন অবশ্যই থাকে।
বাড়ির মুখ্যদ্বারের সামনে বড় গাছ, কোনও মসজিদ অথবা পানির বড় ট্যাঙ্ক বা বিদ্যুৎ সবাস্টেশনের মতো কোনও বাধা যেন না থাকে।আদর্শ বাড়ির একটি প্রবেশদ্বার ও একটি প্রস্থানদ্বার থাকা উচিত।
প্রবেশদ্বার আকৃতিতে মুখ্যদ্বারের চেয়ে যেন ছোট হয়।প্রস্থানের দরজায় একটি পাল্লা হলে ক্ষতি নেই।
মোট দরজার সংখ্যা যেন বেজোড় না হয়।

প্রধান প্রবেশদ্বার জমির অবস্থা ও আশেপাশের রাস্তার ওপর নির্ভর করে।জমির যে দিকে দরজা বসাতে হবে সে দিক্‌ নয়টি সমান অংশে বিভক্ত করে নিতে হবে।নীচের চিত্রে তা দেখানো হচ্ছে।

চিত্র:

সাধারণ ভাবে চিত্র অনুসারে চতুর্থ স্থানে দরজা বসানো শুভ হবে।

যদি কোনও ভূখণ্ড ৯ X ৯-এর সমান ৮১ টি পদে বিভক্ত করা হয় তা হলে চারদিকের সীমারেখার প্রত্যেকটিতে ৮টি পদ অথবা দ্বার থাকবে।এর ফলাফল নিম্নরূপে পাওয়া যায়।‘জ্যোতি নিবন্ধ’ অনুসারে-এতে প্রতিটি দিকেই প্রবেশদ্বার করা যায়।কিন্তু সেই দিককে ৯ দিয়ে ভাগ করতে হবে।৫টি অংশ ডান দিকে এবং ৩টি অংশ বাঁদিকে রেখে ১টি অংশ, যেটি চতুর্থ অংশ, বাঁদিকে প্রবেশদ্বারের জন্য রাখতে হবে।

এই নিয়মে প্রতিটি দিকে একই স্থানে প্রধান প্রবেশদ্বার করা যায়।যদি এটা সম্ভব না হয় তা হলে বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে বাড়ির প্রতিটি দিককে সমান অংশে ভাগ করে নিতে হবে।এটা এরকমভাবে হবে।

১। শিখী – অগ্নিভয় ১৭। পিতৃ – সন্তান নাশ
২। পর্জন্য – কন্যাজন্ম ১৮। দৌবারিক – শত্রুবৃদ্ধি
৩। জয়ন্ত – প্রচুর ধন ১৯। সুগ্রূব – পুত্র ও ধনপ্রাপ্তি
৪। ইন্দ্র – রাজার প্রসন্নতা ২০। পুষ্পদন্ত – সর্বসুখ প্রাপ্তি
৫। সূর্য – ক্রোধের প্রাধান্য ২১। বরুণ – সুখসম্পদ
৬। সত্য – অসত্য বাক্য ২২। অসুর – রাজভয়
৭। ভৃশ – ক্রুরতা ২৩। শেষ – ধনক্ষয়
৮। অনতরিকষ – চুরির ভয় ২৪। পাপযক্ষ্ণা – শত্রুবৃদ্ধি
৯। অনিল – অল্প সন্তানত্ব ২৫। রোগ – মৃত্যু ও বন্ধন
১০। পূষা – দাসত্ব ২৬। অহি – শত্রুবৃদ্ধি
১১। বিতথ – নিম্নবৃত্তি ২৭। মুখ্য – পুত্র ও ধনপ্রাপ্তি
১২। বৃহৎক্ষত – ভোজন ও পুত্রবৃদ্ধি ২৮। ভল্লাট – বিপুল লক্ষ্ণী
১৩। যম – রৌদ্র ২৯। সোম – সকল গুণের সম্পদ
১৪। গন্ধর্ব – কৃতঘ্নতা ৩০। ভুজঙ্গ – পারিবারিক কলহ
১৫। ভৃঙ্গরাজ – নির্ধনতা ৩১। অদিতি – স্ত্রী কলহ
১৬। মৃগ – সন্তানের পরাক্রমের ক্ষয় ৩২। দিতি – দারিদ্র

এই নিয়মে প্রদান প্রবেশদ্বার নীচের তালিকা অনুযায়ী করা শুভ:

পূর্বদিকে – সূর্য, জয়ন্ত ও ইন্দ্র উত্তরদিকে – ভল্লাট ও সোম
পশ্চিমদিকে – কুসুমদন- ও বরুণ দক্ষিণদিকে – বৃহৎক্ষত

সব থেকে ভাল হয় যদি প্রবেশদ্বার ও প্রস্থানদ্বার অর্থাৎ বাড়ি থেকে বের হওয়ার দুটি পৃথক দুয়ার থাকে।প্রধান প্রবেশ পথের দরজা উত্তর দিকে থাকলে দক্ষিণ দিকে বাইরে বের হওয়ার একটা ছোট দরজা রাখা যেতে পারে।আধুনিক মতে সব সময় প্রধান প্রবেশদ্বার তুঙ্গস্থ স্থানে করা ভাল।

চিত্র:

এখানে যেভাবে দেখানো হয়েছে তাতে প্রধান প্রবেশদ্বার এইভাবে বসানো যেতে পারে:

১। উত্তর-পূর্বের উত্তর দিক্‌ ৩। উত্তর – পূর্বের পূর্ব দিক্‌
২। উত্তর – পশ্চিমের পশ্চিম দিক্‌ ৪। দক্ষিণ- পূর্বের দক্ষিণ দিক্‌

এগুলি সবই হল তুঙ্গস্থ স্থান।বাড়ির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখেই দরজার আকার হবে।দরজা এবং জানালা আয়তনের ক্ষেত্রে দক্ষিণের চেয়ে উত্তর দিকে বেশি হবে।তেমনই পশ্চিমের চেয়ে পূর্ব দিকে জানালার আয়তনের ক্ষেত্র বেশি হবে।এই পরিপ্রেক্ষিতে এটা মনে রাখতে হবে যে সংশ্লিষ্ট স্থানের ভৌগলিক পরিস্থিতি ও দিক্‌ হল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।এই কারণেই বাংলাদেশের দক্ষিণ দিক্‌ খোলা বাড়ি সকলের পছন্দ।কিন্তু আয়তনের ক্ষেত্র উত্তর দিকের আয়তনের সমান রাখতে হবে।

বাসস্তুশাস্ত্রমতে জানালা

প্রধান প্রবেশদ্বার ও অন্যান্য দরজার পর জানালা হল বাড়ীঘরের অন্যতম অপরিহার্য অংশ।ঘরের মধ্যে আলো-বাতাস চলাচলের জন্য জানালার ক্ষেত্রেও কতকগুলি নিয়ম মেনে চলতে হবে।

উপযুক্ত আলো-বাতাস চলাচলের জন্য জানালাগুলি এরকমভাবে বসাতে হবে যাতে ‘ক্রস ডেল্টিলেশন’ বা আড়াআড়ি আলো-বাতাস চলাচলের পথ থাকে।ঘরের দক্ষিণ ও পশ্চিম দিকের তুলনায় উত্তর ও পূর্ব দিকে বেশি করে জানালা বসানো ভাল।

জানালা বসাতে হবে ঘর, দেওয়াল ও মেঝের সামঞ্জস্য বজায় রেখে।লম্বা-চওড়াতেও দরজার সঙ্গে সামঞ্জস্য বজায় রেখে জানালা তৈরি করতে হবে।তা ছাড়া দেওয়ালের চওড়ার সঙ্গে খাপ খাইয়ে জানালার পাল্লা তৈরি হবে।কারণ আলো-বাতাস চলাচলের জন্য এটার অবশ্যই প্রয়োজন।

জানালার ক্ষেত্রে আধুনিক “শার্টার জানালা” সংখ্যা নিয়ে এক সমস্যা সৃষ্টি করে।সুতরাং ঘরের আয়তনকে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে।এ ক্ষেত্রে জানালার সংখ্যাকে গুরুত্ব দেওয়ার প্রয়োজন নেই।জানালার কটা পাল্লা কতখানি দেওয়ালের স্থান জুড়ে রয়েছে সেটাই দেখার।এখানে বাস্তুর মতে জানালার পাল্লার সংখ্যা গণ্য হয় না।

নীচে চিত্রে চার পাল্লার জানালা বাস্তু মতো একটা ধরা উচিত।

চিত্র:

প্রধান প্রবেশদ্বারের মতোই অন্যান্য দরজা-জানালাও উর্ধ্ব অর্থাৎ তুঙ্গস্থ স্থানে বসাতে হবে।সম্ভব হলে জানালা বর্ণিত দিক্‌গুলিতে বসালে ভাল হয়।

১। পূর্ব ৪। উত্তর-পূর্বের উত্তর দিক্‌
২। উত্তর ৫। উত্তর-পশ্চিমের উত্তর দিক্‌
৩। উত্তর-পূর্বের পূর্ব দিক্‌ ৬। উত্তর-পশ্চিমের পশ্চিম দিক্‌
৭। দক্ষিণ

এই সব তুঙ্গস্থ দিকে জানালা বসাতে হবে।ভৌগোলিক কারণ বলতে বাংলাদেশের সার্বিক আবহাওয়ার বিচারে দক্ষিণ নিম্নস্থ হওয়া সত্ত্বেও বাংলাদেশের দক্ষিণ দিকে জানালা বসানো সমুচিত।

কিছু শহরাঞ্চল যেমন চট্রগ্রামের হাওয়া চলাচলের প্রকৃতি সম্বন্ধে আবহাওয়া দফতরের মতামত অনুসারে জানা যায় এখানে দক্ষিণ থেকে উত্তরে হাওয়া চলাচল করে।সেই জন্য এখানে দক্ষিণ খোলা ঘর সকলের কাম্য।

চিত্র:

উপরের ছবিটির সাহায্যে হাওয়া কীভাবে চলাচল করে সেই অনুযায়ী জানালা ঘরের কোন দিকে এবং কীভাবে করা উচিত তা পরিষ্কার বুঝা যাবে।

কোনও অবস্থাতেই মোট জানালা ও দরজার সংখ্যা ‘০’-যুক্ত সংখ্যা না হয়।যেমন ১০, ২০, ৩০ ইত্যাদি।এ ক্ষেত্রে দরজা ও জানালার পৃথক পাল্লার মোট সংখ্যাকে এক সঙ্গে গণ্য করতে হবে।এ ছাড়া ভেন্টিলেটারকেও এই সংখ্যার আওতায় আনতে হবে।

বাস্তুতে সিঁড়ির অবস্থান
বাড়িঘরের সিঁড়িও অন্যান্য অংশের মতোই গুরুত্বপূর্ণ। শুধু দোতলা, তেতলা বা বহুতল বাড়ির ক্ষেত্রেই নয়, একতলার বাড়ির ছাদে ওঠার সিঁড়ির ভূমিকা অপরিসীম। গ্রামের বাড়িঘর, খামারবাড়ি সর্বত্রই সিঁড়ির গুরুত্ব আছে। বহুতল বাড়িতে লিফ্‌ট থাকা সত্ত্বেও সিঁড়িকে বাদ দেওয়া যায় না। সুতরাং, বাড়ির সঙ্গে সিঁড়ির সম্পর্ক ওতপ্রোতভাবে জড়িত। তাই, বাস্তু নিয়ম বাড়িঘরে প্রযোজ্য হলে সিঁড়ির ক্ষেত্রেও তার প্রয়োগ একান্তু প্রয়োজনীয়।
১।
সিঁড়ি কোন দিক্‌ দিয়ে ওপরে উঠবে, সে সম্পর্কে বাস্তুতে বলা হয়েছে, সিঁড়ি পূর্ব দিক্‌ থেকে পশ্চিম দিকে উঁচুতে উঠবে।
২।
যদি পূর্ব থেকে পশ্চিম দিকে সিঁড়ি ওঠানো না যায় তা হলে অনন্তপক্ষে উত্তর দিক্‌ থেকে দক্ষিণ দিকে যেন উঠে যায়।
চিত্র:
৩।
সিঁড়ি ঘুরে ওপরের দিকে যাবে ঘড়ির কাঁটার স্বাভাবিক ঘোরার ধরণে অর্থাৎ সিঁড়ি ডান দিকে ওপরের দিকে ঘুরে যাবে।
৪।
জমির দক্ষিণ অথবা পশ্চিম দিকে সিঁড়ি তৈরি করলে ফল ভাল হয়।
৫।
দক্ষিণ বা পশ্চিম দিক্‌ না পেলে দক্ষিণ-পূর্বের দক্ষিণ দিক্‌ ও উত্তর-পশ্চিম দিকের পশ্চিম দিকে সিঁড়ি করাও ভাল।
৬।
কোনও অবস্থাতেই উত্তর-পূর্ব দিকে সিঁড়ি তৈরি করা উচিত নয়। কারণ জমির এই দিক্‌টি অত্যন্ত হালকা ধরণের।
৭।
সিঁড়ির ধাপ সব সময় বেজোড় সংখ্যাং হওয়া উচিত। যেমন- ৭, ৯, ১১, ১৭, ২৩, ৩৫, ৪১ ইত্যাদি। এই বিজোড় সংখ্যা এরকম হতে হবে যাতে সংখ্যাটিকে ৩ দিয়ে ভাগ করলে অবশিষ্ট ২ হয়। এই হিসাবে ১১ ও ১৭ সংখ্যা অতি শুভ।
৮।
সিঁড়ির ক্ষেত্রে অত্যন- গুরুত্বপূর্ণ কথা হল বাড়ির বাইরের লাইনে কখনও সিঁড়ি তৈরি করা উচিত নয়। কারণ, বাড়ির চৌহদ্দির মধ্যে হলেও তা হবে বাড়িটির বাস’বিরুদ্ধ সমপ্রসারণ।
৯।
সিঁড়ি তৈরির সময় এ কথাও মনে রাখতে হবে যে দরজার সামনে যেন সিঁড়ি না থাকে। দরজা খুলে বেরিয়েই যেন সিঁড়ি মুখোমুখি না হয়।
চিত্র:
বাস্তুতে রান্নাঘরঃ
রান্নার ঘর হল এমন একটি অতি প্রয়োজনীয় স্থান যেখানে বাড়ির মহিলারা বেশিরভাগ সময় থাকেন। সুতরাং রান্নাঘর তৈরি করার সময় কতকগুলি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে লক্ষ রাখতে হবে। প্রথমত বাস’শাস্ত্রের নিয়মের সঙ্গে পানির সুবিধা, আগুন, বৈদ্যুতিক শক, ধোঁয়া, কালি, দূষিত বাতাস, পোকা-মাকড় থেকে নিরাপত্তা, পর্যাপ্ত আলো ও বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা ইত্যাদিও আছে। এই সব ব্যবস্থা হলে তবেই গৃহিণীদের শরীর-স্বাস্থ্য ভাল থাকবে এবং তাঁরা অনায়াসে সুস্বাদু ব্যঞ্জন রান্না করতে পারবেন। বাড়ির দক্ষিণ-পূর্ব কোণ রান্নাঘরের পক্ষে অত্যন্ত আদর্শ স্থান। কারণ এই স্থানটি নিয়ন্ত্রণ করেন তাপ ও অগ্নি। তাই এই অঞ্চলটি অগ্নির স্থান। আগুন ও তাপ ছাড়া কিছুই রান্না করা যায় না। রান্নাঘরের অন্য বিকল্প স্থান হল উত্তর-পশ্চিম কোণ। এই স্থানটি রান্নাঘরের পক্ষে মন্দের ভাল। তবে উত্তর-পূর্ব, উত্তরের মাঝামাঝি, পশ্চিমের মাঝামাঝি, দক্ষিণের মাঝামাঝি অথবা মাঝখানে কখনওই রান্নাঘর করা উচিত নয়। যদি বাড়ির দক্ষিণ-পূর্ব কোণে রান্নাঘর করা সম্ভব না হয় তা হলে অন্য কোনও ঘরের দক্ষিণ-পূর্ব কোণে দেওয়াল না ছুঁয়ে একটি রান্নার প্ল্যাটফর্ম তৈরি করে নিয়ে তাতে রান্না করা উচিত।
রান্নার প্ল্যাটফর্মঃ
রান্নার প্ল্যাটফর্ম বা উঁচু স্থানটি যেন পূর্ব বা উত্তরের দেওয়াল স্পর্শ না করে। প্ল্যাটফর্মটি পূর্ব দেওয়ালের দিকে হওয়া উচিত। এর ফলে যে রান্না করবে তার মুখ সহজেই পূর্ব দিকে থাকবে। এটিই সব থেকে শুভ। অন্য বিকল্প হল দক্ষিণ দেওয়াল জুড়ে রান্নার প্ল্যাটফর্ম তৈরি করা। প্ল্যাটফর্ম না হলে বসেও রান্না করা চলে। শুধু দিক ও কোণ মেনে চলতে হবে। রান্না দাঁড়িয়ে হোক বা বসে হোক, স্টোভ, গ্যাস অথবা উনুনে হোক, তাতে কিছু আসে যায় না। কোনও অবস্থাতেই পশ্চিম বা উত্তর দিকে মুখ করে রান্না করা উচিত নয়। রান্নার ব্যাপারে এই দিক্‌গুলি নিয়ম মেনে চলা উচিত। এই নিয়মগুলি মেনে রান্নাঘর তৈরি করলে অনেক সুবিধা হয়। রান্না করা ব্যঞ্জন হয় সুস্বাদু। বন্ধ হয় অপচয়। বাড়ির লোকেদের স্বাস্থ্য ভাল থাকে।

রান্নাঘরের আরও টুকিটাকি:

১।
রান্নার প্ল্যাটফর্মের নীচে গ্যাস সিলিন্ডার রাখা ভাল। গ্যাস সিলিন্ডার সম্পর্কিত নিরাপত্তার ব্যবস্থাগুলি সতর্কভাবে অনুসরণ করা দরকার।
২।
বাসনপত্রের আলমারি দক্ষিণ অথবা দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে রাখা উচিত।

চিত্রঃ

৩।
রান্নাঘরের কল রান্নাঘরের উত্তর-পূর্ব কোণে হওয়া বাঞ্ছনীয়। পানির জালা বা ফিল্টারও উত্তর-পূর্ব স্থানে থাকবে। বাসনপত্র পরিষ্কার করার সিঙ্ক উত্তর-পূর্ব দিকে থাকবে না। এটা দক্ষিণ দিকে হলেই ভাল। মোজাইক, মার্বেল বা স্টেনলেস স্টিলের যে কোনও রকমের সিঙ্ক বসানো যেতে পা
৪।
রান্নাঘরের উত্তর-পশ্চিম দিকে ষ্টোররুম তৈরি করতে হবে। এরকম ষ্টোররুম সর্বশ্রেষ্ঠ। এরকম দিক্‌ না পাওয়া গেলে দক্ষিণ বা দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে ষ্টোররুম করা যেতে পারে। কিন্তু কখনওই রান্নাঘরের উত্তর-পূর্ব দিকে ষ্টোররুম বা কিচেন স্টোর করা যাবে না। রান্নাঘরের আধুনিক সাজ-সরঞ্জাম যেমন- মিক্সার, গ্রাইন্ডার, টোস্টার, কুকিং রেঞ্জ, চার্নার ইত্যাদি দক্ষিণ-পূর্ব কোণে রাখতে হবে। রান্নাঘরের গরম দূষিত বাতাস ও ধোঁয়া বের করে দেওয়ার এগজস্ট পাখা দক্ষিণ দিকে লাগাতে হবে। রান্নাঘরে দুদিকে ক্রস ভেন্টিলেশনের অনুকুলে জানালা করা উচিত। যাতে টাটকা বাতাস রান্নাঘরে চলাচল করতে পারে। ফ্রিজ থাকবে রান্নাঘরের উত্তর-পশ্চিম দিকে।
৫।
বেশির ভাগ বাড়িতে রান্নাঘরেই খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা থাকে। এ সব ক্ষেত্রে রান্নাঘরের পশ্চিম দিকে খেতে বসতে হবে অথবা ডাইনিং টেবিল পাততে হবে।

চিত্র:

শৌচাগার ও গোসলখানা

বড় বড় শহরে স্থানের অভাবে ঘরের সঙ্গে সংলগ্ন শৌচাগার ও গোসলখানা করার রেওয়াজ এখন অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়েছে। অ্যাটাচ্‌ট বাথ এক কথায় অনেকেরই বাঞ্ছিত। তবে তা সত্ত্বেও অনেকেই সংলগ্ন গোসলখানা ও চান কিন্তুএই সঙ্গে অনেকেই শৌচাগারটি পৃথক স্থানে রাখারও পক্ষে। শৌচাগার ভিতরেই হোক অথবা বাইরে, সেপটিক ট্যাঙ্ক অথবা সোক পিটের কাছাকাছি তৈরি করতে হবে। এ জন্য দক্ষিণ অথবা পশ্চিম দিক বেছে নেওয়া যেতে পারে। দক্ষিণ-পশ্চিম বা উত্তর-পূর্ব কোণ অথবা ভবনের মধ্যবর্তী এলাকায় কখনওই শৌচাগার করা উচিত নয়। যদি সম্ভব হয় তা হলে এ বিষয়ে পূর্ব ও উত্তর দিকও এড়িয়ে গেলে ভাল হয়।

চিত্র:

শৌচাগার ও গোসলখানার গুরুত্বপূর্ণ তথ্য

শৌচাগারের আদর্শ স্থান হল পশ্চিম দিক ও উত্তর-পশ্চিম কোণে। বিকল্পে দক্ষিণ-পূর্বেও শৌচাগার করা যেতে পারে।
কোনও মতেই উত্তর-পূর্বে, দক্ষিণ-পশ্চিমে ও ব্রহ্মস’লে বা কেন্দ্রস্থানে যেন শৌচাগার না করা হয়।
পায়খানার প্যান উত্তর-দক্ষিণমুখী বসাতেই হবে।
মেঝের তল থেকে প্যান নিদেনপক্ষে এক থেকে দেড় ফুট উঁচুতে বসাতে হবে।
শৌচাগারের পানির কল যেন উত্তর-পূর্ব ও উত্তর দিকে থাকে। দক্ষিণ-পূর্ব, উত্তর ও পশ্চিমে পানির কল না থাকাই শ্রেয়।
শৌচাগারের মেঝের ঢাল এমনভাবে করতে হবে, যাতে পানির ধারা উত্তর-পূর্ব, উত্তর ও পূর্বের দিকে সহজেই যেতে পারে।
শৌচাগারের দরজা যেন উত্তর ও পূর্বে থাকে।
শৌচাগারে বায়ু চলাচলের জন্য জানালা, ভেন্টিলেটর বা এগ্‌জস্ট ফ্যান প্রয়োজনে যে কোনওদিকে লাগানো যেতে পারে। তবে এগুলি লাগানোর আদর্শস্থান হল পূর্ব, পশ্চিম ও উত্তর দিকে।
আধুনিক ফ্ল্যাট বাড়িতে সংলগ্ন শৌচাগার অবশ্যই যেন উত্তর-পশ্চিম ও দক্ষিণ-পূর্বে থাকে।
শৌচাগারে আয়না বসালে তা উত্তর ও পূর্বদিকে বসানোই বাঞ্ছনীয়।
শৌচাগারে আলো উত্তর-পশ্চিম ও দক্ষিণ-পূর্বে সুবিধামত লাগাতে হবে।
গোসলখানা করার উত্তম স্থান হল পূর্বদিক। বিকল্পে উত্তর বা উত্তর-পশ্চিম ও পশ্চিমে গোসলখানায় করা যেতে পারে। তবে কখনও দক্ষিণ-পূর্ব ও দক্ষিণ-পশ্চিমে করা উচিৎ নয়।
শাওয়ার ও ওয়াশ বেসিন বসাতে হবে গোসলখানার উত্তর-পূর্ব ও পূর্ব দেওয়ালে।
ওয়াটার হিটার, গিজার, সুইচ বোর্ড বসানোর আদর্শ দিক হল গোসলখানার দক্ষিণ-পূর্বদিকের দেওয়াল। বিকল্পে উত্তর-পশ্চিম ও পশ্চিম দিকের দেওয়ালে লাগানো চলবে।
বাথটাব অবশ্যই পূর্ব-পশ্চিম অভিমুখী বসাতে হবে। বাথটাবে গোসল করার সময় মাথা পূর্বে রেখে পা পশ্চিমদিকে রাখতে হবে। (তবে এটা বাংলাদেশ থেকে মুসলমানদের জন্য প্রযোজ্য নয় ) দক্ষিণে পা রেখে গোসল করা উচিৎ নয়।
গোসলখানা সংলগ্ন কাপড়জামা ছাড়ার ঘর করতে হবে দক্ষিণ ও পশ্চিম দিকে।
গোসলখানায় কাপড় কাচা বা বাসন মাজা উত্তর-পশ্চিমে ও পশ্চিম দিকে করা যেতে পারে।
বড় আয়না বসানো চলবে গোসলখানার উত্তর ও পূর্বদিকে। তবে ছোট আয়না (১/ X ১/) সুবিধানুযায়ী যে কোনও দেওয়ালে টাঙানো চলবে।
গোসলখানার পানির ঢাল যেন দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমে না হয়।
বাড়িঘরের অবস্থানঃ

১।
বারান্দা, ফাঁকা জায়গা, জানালা, প্রধান দরজা, টাকা-পয়সা রাখার জায়গা, খোলা স্থান, বাচ্চাদের ঘর, জলাশয় ও নিচু স্থান।
২।
প্রধান দরজা, নামাজ ঘর, ঔষধ গৃহ, খোলা জায়গা, পোর্টিকো, টিউবওয়েল বা জলাধার।
৩।
প্রধান দরজা, জানালা, বারান্দা, খোলা স্থান খাওয়ার ঘর, গোসলখানা।
৪।
রান্নাঘর, দধিমন’ন গৃহ, বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম রাখার স্থান, সেপটিক ট্যাঙ্ক, মিটার বক্স, শোওয়ার ঘর।
৫।
ভারী জিনিসপত্র রাখার জায়গা, শোওয়ার ঘর, কম খোলা জায়গা।
৬।
বাড়ির কর্তার শোওয়ার ঘর, সিঁড়ি, অস্ত্রগার, সবচেয়ে ভারী জিনিস রাখার জায়গা, ফাঁকা জায়গা থাকবে না।
৭।
খাওয়ার ঘর, ড্রইং রুম, পড়ার ঘর, ঢাকা জায়গা, সিঁড়ি ওভারহেড ট্যাঙ্ক, শৌচাগার, স্নানাগার।
৮।
অতিথি কক্ষ, ষ্টোররুম, গ্যারেজ, ভৃত্য বা সেবকদের বাসস্থান, শৌচাগার, গবাদি পশুর থাকার জায়গা।
৯।
ছোট নামাজ ঘর, খালি জায়গা, কোনও ভারী জিনিস বা বিম ব্যবহার করা উচিৎ নয়।

শয়ন বিধি

আয়ুর্বেদ শাস্ত্রমতে সুখ, দুঃখ ,পুষ্টি কৃশতা ,বল ,নির্বলতা ,বীর্যবত্তা, নপুংসকতা, জ্ঞান, অপ্সান, জীবন, মরণ, সমস্ত কিছুই নির্ভর করে নিদ্রার উপর। যদি নিদ্রা যথাযথভাবে হয় তবেই মানুষের জীবন ভরে যায় সুখ,স্বাস্থ্য ও জ্ঞানে। আবার নিদ্রা যদি ঠিকঠিক ভাবে না হয় তবে জীবনে দুঃখ, কৃশতা, নপুংসকতা, অজ্ঞানতা তো বৃদ্ধি হয়ই সেই সঙ্গে স্বাস্থ্যূ ভেঙ্গে গিয়ে জীবন দীর্ঘায়ু না হয়ে স্বল্পায়ুর কারণ হয় ।

শয়নবিধিতে কোন দিকে মাথা রেখে শোওয়া উচিত তারও নির্দেশ রয়েছে। কখনওই উত্তর এবং পশ্চিম দিকে মাথা রেখে শোওয়া উচিত নয়। এতে শরীরে রোগের প্রকোপ বৃদ্ধি হয়। শয়নবিধি সম্পর্কে বিভিন্ন শাস্ত্রে উল্লেখ করা আছে উত্তর ও পশ্চিমে মাথা না দিয়ে দক্ষিণ ও পূর্ব দিকে মাথা রেখে শোওয়ার কথা বলা হয়েছে ।

পূর্ব দিকে মাথা দিয়ে শয়ন করলে বিদ্যাপ্রাপ্তি হয়, দক্ষিণে মাথা দিয়ে শয়নে অর্থলাভ ও আয়ু বৃদ্ধি হয়, পশ্চিমে মাথা দিয়ে শয়নে প্রবল চিন্তার উদ্রেক হয়। আর উত্তরে মাথা দিয়ে শয়নে হানি তো হবেই, মৃত্যু ও মৃত্যুতুল্য ফাঁড়াও ভোগ করতে হতে পারে।

আধুনিক বিজ্ঞানেও উত্তরে মাথা দিয়ে না শুয়ে দক্ষিনে মাথা দিয়ে ঘুমালে শরীর স্বাস্থ্যের পক্ষে শুভকারক সে কথা বলেছে। দক্ষিণে মাথা দিয়ে এবং উত্তরে পা রেখে ঘুমানো যে বিজ্ঞান সম্মত তার কারণ হল মানুষের দেহ একটি চুম্বক। মানুষের মাথা হল উত্তর মেরু এবং পা দক্ষিণ মেরু। পৃথিবীর চৌম্বকক্ষেত্র উত্তর থেকে দক্ষিণ দিকে প্রবাহিত হয়। চৌম্বকীয় উত্তর মেরু ভৌগোলিক দক্ষিণ দিকে অবস্থিত। সেই জন্য চৌম্বকীয় ক্ষেত্র প্রবাহিত হয় দক্ষিণ থেকে উত্তরে। মাথা যদি উত্তর দিকে থাকে তবে রক্ত মাথার দিকে প্রবাহিত হবে। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায় যে এটা স্রোতের বিপরীতে সাঁতার কাটার মতো যা করতে অতিরিক্ত শক্তির প্রয়োজন হয়। যা স্রোতের পক্ষে সাঁতার কাটার বিপরীত। এ সম্বন্ধে পূর্ব ও পশ্চিম হচ্ছে পার্শ্বিক এবং এদের প্রভাবের খুব একটা গুরুত্ব নেই। উত্তরে মাথা দিয়ে শয়ন করলে পৃথিরীর উত্তর মেরুর সঙ্গে মাথার উত্তর মেরুর বিকর্ষণজনিত কারণে রক্ত সঞ্চালন দ্রুত হয়। শরীর অশান- হয়। দুঃস্বপ্ন হয়। আর দক্ষিণে মাথা দিয়ে শয়নে পৃথিবীর দক্ষিণ মেরু এবং দেহের উত্তর মেরুর আকর্ষণ জনিত ফলে দেহ শান্ত হয়। রক্ত সঞ্চালন সুষম হয়। বিজ্ঞানী ফ্যারাডের সূত্র অনুসারে মানবদেহ বিদ্যুৎ সুপরিবাহী এবং দেহ নিজে একটি চুম্বক বলে দেহের চতুষ্পার্শ্বে বিদ্যুচ্চুম্বকীয় আবেশ সৃষ্টি হয়। দেহের রক্তে হিমোগ্লোবিনে লৌহকণা থাকায় দেহে চুম্বকীয় আবেশ সহজে সৃষ্টি হতে পারে। তাই উত্তরে মাথা দিয়ে শয়নে দেহের রক্তের হিমোগ্লোবিনে চুম্বক বিকর্ষণ জনিত কারণে চৌম্বকীয় আবেশের ফলে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। আর দক্ষিণে মাথা দিয়ে শয়নে দেহে বিষমমেরুজনিত আকর্ষণে রক্ত সঞ্চালন সুষম হওয়ার কারণে দেহে প্রশান্তি আনে। তাই দক্ষিণে মাথা দিয়ে শয়নই হল সর্বোত্তম।
রঙের সৌন্দর্য ও কল্যাণবার্তা

স্বাস্থ্য ও মনের ওপর রঙের প্রভাব প্রচন্ড। আকর্ষক রঙের পরিবেশে মনও থাকে আনন্দে পরিপূর্ণ। একঘেয়ে ভাব কেটে যায়। নিরাশা দুর হয়ে যায়। হিন্দু ধর্মীয় কর্মে সিঁদুরের লাল, হলুদের পীত, পাতার সবুজ, আটারসাদা রং ইত্যাদি ব্যবহৃত হয়। এগুলি সবই স্বাস্থ্য, স্ফূর্তি ও কল্যাণের জন্য।

সূর্যের রশ্মিতে সকল রঙের সংমিশ্রণ থাকে। সূর্যের রশ্মি থেকে রামধনুর সাতটি রং আমাদের পরিবেশ ও মনকে প্রভাবিত করে। সূর্যের ছত্রছায়ায় নানা বনস্পতি এবং জীব যেরকমভাবে লালিতপালিত হয়, সেইরকমভাবে সবুজ, লাল ও নীল রং মানুষকে সুস্থ্য, সবল যশস্বী ও গৌরবান্বিত তৈরি করে। লাল রং সৌভাগ্যের চিহ্ন আর সবুজ রং ব্যক্ত করে শুভেচ্ছা।

লাল রং :

হিন্দু ধর্মে ধর্মীয় রঙ হল লাল। এই লাল রঙকে সব থেকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। প্রায় প্রতিটি মাঙ্গলিক কাজে লাল রঙের ব্যবহার হয়ে থাকে। প্রায় সকল দেবদেবীর মূর্তিতে লাল সিঁদুরের তিলক পরানো হয়। লাল তিলক শৌর্য এবং বিজয়ের প্রতীক। লাল তিলক লাগালে ব্যক্তির মধ্যে তেজস্বিতা, পরাক্রম, গৌরব ও যশের অসি-ত্ব আছে বলে মনে করা হয়। গৌরবের রং হল লাল। সুস্বাস্থ্য ও শক্তি মানুষের শরীরের গোলাপি আভা থেকেই প্রকাশিত হয়।
প্রাচীনকাল থেকেই লাল রঙের বিশিষ্ট স্থান রয়েছে ভারতীয় নারীর জীবন ও সংসারে। সধবা মহিলারা মাথায় সিঁদুর বা লাল টিপ পরেন। নারীর গৌরব, সম্মান, সৌভাগ্য এবং স্নেহ লাল রং থেকেই বিকশিত হয়।

লাল রং শক্তি, উৎসাহ, স্ফুর্তি ও পরাক্রমের প্রতীক। আনন্দ প্রকাশের রং ও লাল। বিবাহ, জন্ম ও উৎসবে আনন্দের মনোভাব ব্যক্ত হয় লাল রং দিয়েই।

ধনদাত্রী দেবী লক্ষ্মীও পরেন লাল বস্ত্র। লাল রং ধনসম্পদ, বিপুল সম্পত্তি সমৃদ্ধির শুভ প্রকাশ করে। মা লক্ষ্মীকে লাল পদ্মফুলের ওপর বসানো হয়। এই লাল পদ্ম হল সমৃদ্ধির প্রতীক।

গেরুয়া রং :

গেরুয়া হল আধ্যাত্মিক প্রকাশের রং। এটি জ্ঞান, ত্যাগ, তপস্যা ও বৈরাগ্যের প্রতীকও বটে। হিন্দু যোগী, তপস্বী, সাধু, বৈরাগী সকলেই গেরুয়া বস্ত্র পরেন। মনে হয় তাঁরাও যেন অন্ধকার থেকে আলোর দিকে, মৃত্যু থেকে অমৃতের দিকে এবং অজ্ঞানতা থেকে জ্ঞানের দিকে অগ্রসর হয়ে চলেছেন।

যেমন অগ্নি থেকে জ্যোতির প্রকাশ তেমনই গেরুয়া বস্ত্রধারী যোগীও আধ্যাত্মিক জ্যোতির মাধ্যমে প্রজ্বলিত হয়ে ওঠেন। গেরুয়া বস্ত্রধারী সাধু দেবতাদের গুণগুলিকে নিজের মধ্যে বিকশিত করতে চান। এই রং শুভ সংকল্পের সূচক।

সবুজ রং :

সবুজ রং সমগ্র প্রকৃতির মধ্যে ব্যাপ্ত রয়েছে। আমাদের জীবনে এই সবুজ রংটি অধ্যাত্ম প্রেরণাদায়ী পরিবেশের প্রতীক। এটি গাছপালা, শস্য সুশোভিত মাঠ, কেয়ারি, পার্বত্য অঞ্চল আচ্ছাদনকারী মধুর রং। সবুজ মনকে শান্তি দেয় এবং হৃদয়কে করে শীতল। মানুষকে সুখ, শাস্তি, স্ফুর্তি দেয় এই প্রিয় সবুজ রং। মুনিঋষিরা নিজেদের আধ্যাত্মিক উন্নতির জন্য উঁচু সবুজ পর্বত শীর্ষে, লম্বা ঘাসের সবুজ মাঠের মধ্যে শান্ত, সুখী পরিবেশকে আপন করে নিয়েছিলেন।

হলুদ রং :

জ্ঞান, বিদ্যা ও বিবেকের প্রতীক হল হলুদ রং। এই রং সুখ শান্তি, অধ্যয়ন, জ্ঞান, যোগ্যতা, একাগ্রতা এবং মানসিক ও বুদ্ধিবৃত্তির উন্নতিরও প্রতীক। হলুদ বা বাসন্তী রং মস্তিষ্ককে প্রফুল্ল ও উত্তেজিত করে। জ্ঞানের প্রতি আগ্রহ আনে। মানুষের মনে নতুন নতুন সুস্ব্যা চিন্তাধারা তৈরি করে এই বাসন্তী রং। বসন্ত ঋতু মনের আনন্দদানকারী জ্ঞানবর্ধক ঋতু। ভগবান শ্রীবিষ্ণুর পোশাকের রং হলুদ, তাঁর পীতবস্ত্র অসীম জ্ঞানের দ্যোতক। ভগবান শ্রীগণেশের ধুতিও হলুদ রঙ্গের। সকল পীতবস্ত্র অসীম জ্ঞানের দ্যোতক। ভগবান শ্রীগণেশের ধুতিও হলুদ রঙের। সকল মঙ্গল কার্যে হলুদ ধুতি পরা গণেশ বিঘ্ননাশকারী বলে গণ্য হন।
নীল রং :

মনোবিজ্ঞান অনুসারে রং শক্তি, পৌরুষ ও বীরত্ব মনোভাবের প্রতীক। আর শক্তি-পৌরুষের বার্তা আছে নীল রঙে। পুরুষোত্তম ভগবান শ্রীরামচন্দ্র এবং লীলা-পুরুষোত্তম ভগবান শ্রীকৃষ্ণ উভয়ের জীবনই মানবতার রক্ষা এবং দানবের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতেই কেটে গিয়েছে। এঁদের উভয়েরই শরীরের বর্ণ ছিল নীল।

যে রকম নীল রং আকাশ এবং পৃথিবীতে সর্বব্যাপ্ত তেমনই নীল বর্ণের বীর শ্রীরাম এবং মহাযোদ্ধা শ্রীকৃষ্ণও সর্বব্যাপক ও সর্বশক্তিমান। নীল রং ক্ষত্রিয় স্বভাব প্রকট করে। উদ্যোগী পুরুষের রং নীল। এই রঙের পোশাকধারী ইন্দ্রিয়কে নিজের নিয়ন্ত্রণে রাখতে সমর্থ হয়। নীল রংকে সমুদ্র গভীর বলে মনে করা হয়।

সাদা রং :

শ্বেত রঙের সৃষ্টি সাতটি বিভিন্ন রঙের সংমিশ্রণে। সূর্যের সাদা রশ্মিকে ভেঙে দিলে তা থেকে সকল রকমের রং বেরিয়ে আসে। এতে সকল রকমের রঙের কিছুটা ছায়া থাকে। শ্বেত রং পবিত্রতা, শুদ্ধতা, বিদ্যা ও শান্তির প্রতীক। এর দ্বারা মানসিক, বৌদ্ধিক ও নৈতিক স্বচ্ছতা বিকশিত হয়। জ্ঞান ও বিদ্যার রং সাদা। বিদ্যার অধিষ্ঠাত্রী দেবী সরস্বতীর সাদা রং সব থেকে প্রিয়।

সূর্যের রশ্মির রং মানুষ, পশু, পাখি ইত্যাদি মন ও হৃদয়ে প্রভাব সৃষ্টি করে। সব রং সবার ভাল লাগে না। মানুষের শরীর ও মনে রঙের প্রভাব সম্পর্কে কয়েকটি কথা এখানে বলা দরকার। মানুষ যে সব রং ভালবাসে এবং ব্যবহার করে তার থেকে কিছু প্রভাব সৃষ্টি হয়। যেমন, নীল রং ভাবাবেগ, শান্তি, হালকা মেজাজ এবং অন্যদের ভাবাবেগকে শ্রদ্ধা করে।
সূর্যের রশ্মি ও রামধনুর রঙিন ছটা চিরকালই সৌন্দর্যের এক অসাধারণ প্রতিফলন। এরকম রঙের খেলা যে কতটা দৃষ্টিনন্দন তা আমরা সকলেই জানি। যুগ যুগ ধরে রামধনুর সাতটি রং মানুষের কাছে এক বিরল অভিজ্ঞতা। প্রকৃতপক্ষে গ্রহজগতের সঙ্গে এই জগতের এক আশ্চর্য সেতুবন্ধন ঘটায় রামধনু। এই সেতুবন্ধনের মাধ্যমেই আমাদের জীবনে শাসনের ক্ষমতা প্রবেশ করে। প্রকৃতপক্ষে সূর্যের কিরণ ও প্রকাশের মাধ্যমেই গ্রহশক্তি কাজ করে।

রামধনুর সাত রং :

বেগুনী : সবর্দা হাসিখুশি থাকার মনোভাব। সামাজিক হওয়ার প্রবনতা।
নীল : মাঝারি – কঠোর পরিশ্রমী, নিজের কাজে বেশি উদ্যোগী।
গাঢ় – অপরের চোখে স্বার্থপর কিন্তু নিজেদের জীবনের উদ্দশ্য খুঁজে পায়।
আসমানি : পরিপূর্ণতার জন্য সংগ্রামী মনোভাবের পরিচায়ক।
সবুজ : প্রভাব বিস্তারকারী হওয়ার প্রবণতা এবং অন্যদের কাছে সুপরিচিত হওয়ার গভীর ইচ্ছা।
হলুদ : অন্যদের চেয়ে শ্রেষ্ঠ হওয়ার প্রবণতা। প্রতিযোগিতায় অন্যদের তুলনায় শ্রেষ্ঠত্ব লাভের ইচ্ছা।
কমলা : সামাজিকভাবে সকলকে নিয়ে চলার প্রচেষ্টা। ত্যাগের প্রতীক। জ্ঞানপিপাসু। গাম্ভীর্যপূর্ণ চালচলন।
লাল : স্বভাবগতভাবেই সাহসী, জীবন উপভোগ করার অনুভুতি। স্পষ্টবাদী।

রামধনুর এই সাতটি রঙের বাইরেও আরও বেশ কিছু রং আছে যেগুলি প্রকৃতপক্ষে এই সাতটি রঙেরই সমাহার। সেই রংগুলির কয়েকটি সম্পর্কে নীচে বলা হল।

কালো : বেআইনি কাজকর্মে জড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা। কখনও কখনও পরিণতির কথা না ভেবেই ওইসব কার্যকলাপে লিপ্ত হওয়া।

চকোলেট : বিপরীত লিঙ্গের প্রতি শ্রদ্ধা, সব সময় পরিস্কার পরিচ্ছন্ন থাকা এবং অন্য স্বাভাবিক মানুষের চেয়ে যৌন আকাঙ্খা তীব্র।

বিভিন্ন মানুষের ব্যক্তিত্ব বিভিন্ন রকম। তবে রঙের ব্যবহারের উপর তার অনেকটাই সম্পর্ক রয়েছে। রঙের ব্যবহারের ওপর মানুষের গুণাগুণেরও তারতম্য কীভাবে ঘটে এবার তা দেখা যাক।

লাল : অনুকুল : তেজস্বী, অন্যক্ষেত্রে উৎসাহী, প্রচন্ড ইচ্ছাশক্তি, সাহসী। প্রতিকল : আগ্রাসী, আবেগপ্রবণ, অধৈর্য, অল্পেই রেগে যাওয়া।

কমলা : অনুকূল : সামাজিক সকলের সঙ্গে মিলেমিশে চলতে পারে, সকলকে আপন করে নেওয়ার ইচ্ছ। অন্যেরা পছন্দ করে। ভাবাবেগ তো আছেই। কিন্তু তার চেয়েও বেশি অন্যের সঙ্গলাভ। প্রতিকূল : আনুগত্যের অভাব, আলস্য।

হলুদ : অনুকূল : বুদ্ধিজীবী, চিন্তাবিদ, আধুনিক ও চ্যালেঞ্জ জাতীয় জিনিসের প্রতি ভালবাসা, যুক্তিবাদী, সহজেই শিখে নেওয়ার ক্ষমতা এবং অভিনব বস’র প্রতি ভালবাসা। প্রতিকূল : নার্ভাস, জেদ, সিদ্ধান- নিতে অপারগ, নিজের বুদ্ধিমত্তার প্রতি অতিরিক্ত গর্ববোধ। দুর্বল ইচ্ছাশক্তি।

সবুজ : অনুকূল : সহানুভূতিসম্পন্ন, অমায়িক উদ্ভাবন শক্তিসম্পন্ন, আরোগ্যকর, সামাজিক, প্রকৃতির প্রতি প্রেম। প্রতিকূল : পান-ভোজনরসিক এবং বাচাল পরিসি’তির পরিপ্রেক্ষিতে ব্যস্ততা।
নীল : অনুকূল : বিবেক, বুদ্ধিমত্তা, আন্তরিক, অনুভূতিসম্পন্ন, সতর্ক, আত্ম-আশ্বস্ত, সংস্কৃতিপরায়ণ, দয়িত্বপূর্ণ, অন্তর্দর্শী, রোগী। প্রতিকূল : বিষাদগ্রস্ত, হিসেবি, স্বার্থপর, আগন্তকের প্রতি সন্দেহবাতিক, অনমনীয়।

বেগুনী : অনুকূল : আরও ভাল কিছুর আশায় থাকা, ভাল কিছু খোঁজ করা। আধ্যাত্মিক অন্বেষণকারী। সহিষ্ণু, সব কিছু মানিয়ে নেওয়ার ক্ষমতা ও রসিক। প্রতিকূল : আত্মগর্বিত, ব্যঙ্গবিদ্রূপকারী, দাম্ভিক, জমকালো, মেধা গ্রহণকারী।

সাদা : অনুকূল : দয়াময়, ভদ্র, উদার, উপকারী, অধ্যাত্ম উপলব্ধিকারী। প্রতিকূল : জীবনে উন্নতির অভাব, কঠোর ইচ্ছাশক্তির মানুষেরা সহজেই এ সব লোকের কাছ থেকে স্বার্থ আদায় করে নেয়।

বাড়িঘরের রং :বাড়িঘরের রং প্রবেশদ্বারের দিক অনুসারে করা শুভদায়ক। নীচে এ সম্পর্কে একটি তালিকা দেওয়া হল।

চিত্রঃ

রং ও রাশিচক্রঃমানুষের জীবনে বিভিন্ন রঙের একটা গুরুত্ব আছে। রাশিচক্র হিসেবে রং ব্যবহার ও তার প্রভাবে মানুষের জীবন সৌভাগ্যময় ও আনন্দদায়ক হতে পারে। রাশিচক্রের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে কী রং করা দরকার তার তালিকা নীচে দেওয়া হল।

চিত্রঃ

বিভিন্ন দিকের কথা বিবেচনা করে বাড়িঘরের রং সম্পর্কে বিশিষ্ট পন্ডিতব্যক্তিরা নানা পরামর্শ দিয়েছন। বিভিন্ন দিকের গ্রহ-নক্ষত্রের প্রভাবের কথা ভেবেই এই রং সুপারিশ করা হয়েছে।