fbpx

বৃক্ষ, বন বাগান

বৃক্ষ ও বন আমাদের কত বন্ধু তা আর বলার অবকাশ রাখে না । যুগ যুগ ধরে মানুষ গাছপালা উপকারিতা বুঝেছে। বৃক্ষ সমৃদ্ধির পথ প্রশস্ত করে । নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলে এ কথা আরও বেশি সত্য বলে পরিচিত । মানুষ গাছপালা ছাড়া বাঁচতে পারেনা। গাছের কাছ থেকে মানুষ শুধু দৈনন্দিন জীবনের চাহিদা গুলি আদায় করে নিয়ে চলেছে । যেমন বাড়িঘরের জন্য আসবাপত্রের জন্য, যন্ত্র পাতি তৈরির জন্য, গ্রামে জ্বালানির জন্য কাঠের দরকার । আবার ফুল-ফল ও ছায়া তাও এই গাছ থেকেই পাওয়া যায় । এ সব তো আছেই তা ছাড়াও বিভিন্ন উপায়ে আমরা গাছের সাহায্য নিয়ে থাকি । তাই আমাদের জীবনে গাছ অতি গুরুত্বপূর্ণ ।

জলবায়ুর তীক্ষ্ণতাকে উপশম, মাটি সংরক্ষণ- এ ছাড়া পানির সংগ্রহ বজায় রাখতে গাছ সাহায্য করে। বৃষ্টিকে নিয়ন্ত্রণ, শীত গ্রীষ্মকে অনুকুল রাখা এবং বাতাস ও পানির বেগকে আটকে দিয়ে ভূমিক্ষয় রোধ করে গাছ পালা ও জঙ্গল । প্রাচীন গ্রন’ গাছ সম্পর্কে বলা হয়েছে , যে মানুষ রাস্তার ধারে এবং জলাশয়ের পাশে গাছ লাগায় সে বেহেশ্‌তে ততদিন খুব আনন্দে থকবে যতদিন ওই বৃক্ষটি ফলবতী থাকবে । গাছ নিজের মাথায় গরম সহ্য করে নেয়, কিন্তু নিজের ছায়া দিয়ে অন্যদের গরম থেকে রক্ষা করে । এইটিই হল গাছের বিশেষত্ব।

বৃক্ষ নিজের পাতা, পুল, ফল ,ছায়া, বল্কল, কাষ্ঠ, গন্ধ, ভস্ম, আঁটি ও কোমল অঙ্কুর দিয়ে সকল প্রাণীকে সুখ দেয়। ১ হেক্টর এলাকার গাছপালা ৩ মেট্রিক টন বায়ু গ্রহণ করে ২ মেট্রিক টন বিশুদ্ধ অক্রিজেন প্রদান করে । মানুষের জীবনে গাছপালা জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত সঙ্গী । শৈশবে দোলনা ও খেলনা রূপে যে বৃক্ষের সঙ্গে আমাদের সম্পর্কের শুরু, তারপর স্কুল-কলেজ ও অফিসের চেয়ার -টেবিল, বিবাহিত জীবনের আসবাবপত্র, বৃদ্ধাবস্থায় লাঠি ও মৃত্যুর পর কবর, সর্বত্রই গাছ আমাদের পরম সঙ্গী।

বাংলাদেশের সংস্কৃতিতে বৃক্ষরোণের পরম্পরা প্রচীনকাল থেকে চলে আসছে। আমাদের সংস্কৃতি ধর্ম নিরপেক্ষ। শাস্ত্রে বৃক্ষের যত্নের বিধান আছে। বাস্তুশাস্ত্রে বসবাসের স্থানে গাছ লাগানো,বন-উদ্যান ও বাগান করাকে শুভ বলা হয়েছে। এই গাছপালার লালনপালন কোনও রকমের জাতিগত ভিত্তিতে করা হয় না। বিশুদ্ধ বায়ু শুধু স্বাস্থ্যই নয়, সব দিক্‌ থেকে, লাভজনক। গাছ দুষণের হাত থেকে জীবজগৎকে রক্ষা করে। এই গাছপালা কমে যাওয়ার ফলে দুষণের পরিমাণ বৃদ্ধি হচ্ছে। বৃষ্টি হচ্ছে কম। এর ফলে দেখা দিচ্ছে নানা রকম রোগ। নিঃশ্বাসের কষ্ট বৃদ্ধি, নানা জটিল রোগ দেখা দিচ্ছে। তাই মানুষ এখন শহর ছেড়ে গ্রামের মতো পরিবেশে ফিরে যেতে চাইছে। শহরে কংক্রিটের জঙ্গলময় পরিবেশকে কিছুটা দূষণ মুক্ত করার জন্য গাছপালা লাগানো অত্যন্ত জরুরী ।

সনাতন ভারতীয় শাস্ত্রে অরণ্য বৃক্ষের মতোই গুরুত্বপূর্ণ। মানব-জীবনে মানুষ চারটি অস্থায় চার ধরনের কর্মে রত থাকে- ব্রহ্মচর্য, গার্হস্থ্য, বানপ্রসস্থ ও সন্ন্যাস। বানপ্রসস্থ আর সন্ন্যাস জীবনে অরণ্যেও সন্তান অত্যন্ত গুরুত্বপুর্ণ। তীর্থভ্রমন সর্ম্পকে বলা হয়েছে, দ্বাদশ অরণ্য পরিভ্রমণে তীর্থের পূণ্যফল লাভ হয়। এই পরিপ্রেক্ষিতে দ্বাদশ অরণ্যের কথা বলা দরকার ।

তুলসী গাছ :

গৃহস্থাশ্রমের অন্যতম পবিত্র গাছ হল- তুলসী। এই গাছের উৎকৃষ্ট ওষুধ বা ভেষজের গুনাবলী আছে। এর ডাল, পাতা দিয়ে বহু ওষুধ তৈরি হয়। প্রতিদিন সকালের সময় দুটি তুলসী পাতা পানিতে রেখে সে পবিত্র পানি পান করলে কোনও রকমের রোগ হয় না । চর্ম রোগে তুলসী পাতা আশ্চার্যজনক ভাবে কাজ করে । তুলসির বাতাসে নানা রোগ সারে। এর রস ফুলফুসকে নীরোগ রাখে। পাতা চর্বণে মুখের দুর্গন্ধ নাশ হয়।

তুলসী গাছ কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্রহণ করে আক্সিজেন দেয়। প্রতি বাড়িতে অন্তত দুটি তুলসী গাছ লাগানো উচিৎ। এতে বাড়ির সকলের স্বাস্থ্য ভাল থাকে। দুষণ রোধে তুলসী অতুলনীয়। এতে মানুষের জীবনীশক্তি বৃদ্ধি হয়। রোগ দূরে থাকে। তুলসীর গন্ধবাহী বায়ু যে দিকেই অর্থাৎ দশদিকে যাক না কেন সবদিক সে বায়ু দুষণমুক্ত করে। শুধু তাই নয়, পৃথিবীতে যে চার প্রকার প্রাণী- অন্ডজ পিন্ডজ, জরায়ুজ ও উদ্ভিজ্জ আছে, প্রত্যেকের পক্ষেই অত্যন্ত উপকারী এই তুলসী গন্ধযুক্ত বায়ু।

প্রযুক্তি ও বিজ্ঞানের উন্নতি মানুষের অগ্রগতিতে সহায়ক হলেও দূষণ সৃষ্টি করে মানুষ জীবনে ক্ষতির কারণও হয়ে দাঁড়িয়েছে। ক্রমাগত দূষণে বায়ুমণ্ডলের ’ওজোন’ স্তর নষ্ট হচ্ছে। ’ওজোন ’ সূর্যের সরাসিরি অতিবেগুনি রশ্মি থেকে পৃথিবীকে রক্ষা করে চলেছে।

বনসৃজনের মাধ্যমে আমরা দূষণ আটকানোর চেষ্টা করে চলেছি। এক্ষেত্রেও তুলসীর কোনও বিকল্প নেই। অন্যান্য গাছ শুধু দিনেরবেলায় কার্বণ ডাই-অক্সাইড গ্রহণ করে এবং অক্সিজেন দেয়। রাতের বেলা বিপরীত ক্রিয়ায় অক্সিজেন গ্রহণ করে কার্বণ ডাই-অক্সাইড ত্যাগ করে। কিন্তু তুলসী দিন ও রাতে সর্বদাই অক্সিজেন দেয়। অন্যান্য গাছের এই ক্ষমতা নেই। বৃক্ষ আয়ুর্বেদ সম্পর্কে ঋষি ‘চরক’ বলেছেন, বাড়ির পূর্ব দিকে অশ্বত্থ, দক্ষিণে পাকুড়, পশ্চিমে বট ও উত্তর দিকে উদুম্বরের গাছ লাগাবেন না।

গৃহের পুর্বদিকে অশ্বত্থ গাছ থাকলে অগ্নিভয় হয়। দক্ষিণে পাকুড় গাছ থাকলে পিত্ত বৃদ্ধি হয়। পশ্চিমে বট বৃক্ষ থাকলে রাজপীড়া হয় এবং বাড়ির উত্তরে ডুমুর গাছ থাকলে উদরাময় রোগ হয়। সুপারি, শ্রীফল, নারিকেল (ঝুনো), লবণী (লবণাক্ত), জাম, কাঁঠাল, আম, ডালিম, কমলালেবু, লেবু, মধুপর্ণী, কলা, শিরীষ, আমলকী, জাতি, চাঁপা, মল্লিকা, বকুল, সজনে, পাটল, দেবদারু, অশোক, জয়ন্তী ও টগর ইত্যাদি গাছ বাড়ি ঘরে লাগালে সমৃদ্ধি ঘটে। জ্যোতিষতত্ত্বে বলা হয়েছে যে, জাম, সুপারি, কাঁঠাল, আম, কেতকী, জাতি, পদ্ম, টগর, দারুচিনি,মল্লিকা, নারকেল,কলা ও পটল ইত্যাদি গাছপালা যদি বাড়ি ঘরে লাগানো হয় তা হলে সে বাড়িতে ধন-সম্পদে পরিপূর্ণ থাকে।

জ্যোতিষতত্ত্ব অনুসারে দাড়িম্ব, অশোক, পু্‌ন্নাগ, বিল্ব ও কেশরের গাছ বাড়িঘরে লাগানো মঙ্গলজনক। রক্ত পুষ্প গাছ লাগালে রাজভয় হয়। আর শাল্মলী গাছ লাগালে হয় গৃহবিচ্ছেদ। যে সব গাছ বাড়িতে লাগানো উচিৎ নয় সে গুলি হলো- নিম, পলাশ, খেজুর, জাম, সরল, তেতুল, কাঞ্চন, স্থুল শিম্ব, বহেরা, ধুতরো, হরীতকি, সপ্তপর্ণী ও মনসা, এই সব গাছ লাগালে ক্ষতি হয়।

গৃহ সন্নিকটস্থ বৃক্ষ:

যে বাড়িতে বসবাস করা হয় সেই বাড়িতে বৃক্ষ লাগানো উচিৎ নয়। কারণ বড় গাছ বসালে শিকড় বাড়ির ক্ষতি করে। আর বড় গাছ বেশি পরিমানে কার্বর ডাই-অক্সাইড ছাড়ে বলে তা স্বাস্থ্যসম্মত নয়। সে কারণে বাড়ির সংলগ্ন কোন বাগান করার জায়গা থাকলে সেখানে বৃক্ষ লাগানো যেতে পারে। নীচে কোন গাছ শুভ বা অশুভ তার তালিকা দেওয়া হল। বসত বাড়িতে বড় গাছ না লাগিয়ে ছোট গাছ বাহারি বড় পাতা ওয়ালা গাছ লাগানো উপকারী। এগুলি ক্ষতিকারক সূর্যরশ্মি, চৌম্বকীয় তরঙ্গ ও মহাজাগতিক রশ্মিকে শোষণ করতে পারে।

দিক্‌
শুভ
অশুভ
পূর্ব বট অশ্বত্থ, আম, জাম, কলা প্রভৃতি ফলবতী গাছ।
পশ্চিম অশ্বত্থ আম, কলা বট, ক্যাথ
উত্তর ক্যাথ, পাকুড় কলা, ডুমুর
দক্ষিণ গোলাপ, ডুমুর আম, ক্যাথ
দক্ষিণ-পূর্ব বেদানা, ডালিম বট, অশ্বত্থ, কাঁটাযুক্ত যে-কোন গাছ, শিমুল, পাকুড়, গাছের পাতা-ছাল থেকে দুধ বার হয় এরকম গাছ, আকন্দ, মহুয়া প্রভৃতি।
দক্ষিণ-পশ্চিম তেতুল কদম্ব
উত্তর-পূর্ব আমলকী কলা
উত্তর-পশ্চিম বেল কাঁটাযুক্ত গাছপালা

অশ্বত্থঃ সর্ববৃক্ষনাম: ভারতের ও বাংলাদেশের সনাতন ধর্মালম্বীরা অশ্বত্থ, ডুমুর, বট, পাকুড় ও আমকে পঞ্চবৃক্ষের মধ্যে গণ্য করা হয়। তাঁদের ধর্মীয় বিশ্বাস অনুসারে এর মধ্যে অশ্বত্থের স্থান সর্বশীর্ষে। অশ্বত্থ গাছ কাটলে বংশ হানি হয়। তবে হোম-যজ্ঞের মতো পবিত্র কাজের জন্য অশ্বত্থ গাছের কাঠ কাটলে কোনও দোষ হয় না, বরং অক্ষয় স্বর্গ লাভ হয়। অশ্বত্থ বৃক্ষ পুজো করলে সকল দেবতার পুজো করা হয়। (মুসলমান মাত্রই পূজার কোন প্রশ্নই আসে না।)

গাছপালার অলৌকিক ক্ষমতা: ইসলামিক জ্যোতিষশাস্ত্রে ২৭ টি নক্ষত্র, ১২টি ঘর ও ৯টি গ্রহ আছে। এরাই সম্পুর্ণ জ্যোতিষ সিদ্ধান্তকে পরিচালনা করে। তার মধ্যে ওই ৯টি গ্রহ হলো গুরুত্বপুর্ণ। যখন তাদের অমঙ্গলকর বলে গণ্য করা হয় এবং তার ফলও অমঙ্গলজনক। এই অমঙ্গলকর ফল ও পরিসি’তি এড়াতে জরুরি প্রতিকার ব্যবস্থা হিসেবে গ্রহরত্ন ধারণ, তন্ত্র ও মন্ত্র উচ্চারণ, দান-ধ্যান ইত্যাদি তো আছেই এবং এই সঙ্গে কয়েক ধরনের ভেষজ, তণ্ডুল জাতীয় পদার্থ ও গাছের বীজ দিয়ে গোসল করার বিধিও বলা হয়েছে।

গাছপালা একদিকে যেমন আমাদের সামাজিক জীবনের অংশ তেমনই আমাদের আচার অনুষ্ঠানেরও অঙ্গ। আর শুধু জীবনের অঙ্গই নয়, মানুষের জীবনে গ্রহের কুপ্রভাব কমিয়ে দিতে পারে, অমঙ্গল থেকে মুক্তি দিয়ে জীবনকে মঙ্গলময় ও সুখী করতে পারে এই গাছপালা।

বাস্তুমতে বাগানঃ

মুসলমান বিজ্ঞজনেরা ও পবিত্র কোরআন শরীফে গাছপালা রোপনের কয়েকটি নির্দিষ্ট নিয়মের প্রচলন করেছিলেন। তাঁদের মতে বাড়িঘরের চারদিকে বিভিন্ন রকমের গাছপালা লাগানো উচিত। শাস্ত্রমতে বাগানের গুরুত্ব বুঝাতে গিয়ে বলা হয়েছে যে বাড়ি তৈরির আগে জমিতে বাগান তৈরি করা উচিত। এর দ্বারা জমির সরসতার সম্বন্ধে আন্দাজ করা যায়।

শাস্ত্রীয় মতে ‘বিল্ব’ বা বেলগাছ লাগালে সেই বাড়িতে পুরুষানুক্রমে ধনসম্পদে পরিপূর্ণ থাকে। কেউ যদি ফুল ও ফলের গাছ লাগায় তা হলে তার সুফল সে লাভ করে। বাস্তুশাস্ত্রানুসারে বাসসাথনের কাছে বাগান তৈরি করা উচিত। এই বাগান তৈরি করতে হবে বাড়ির উত্তর-পশ্চিম দিকে। বাগানের ফুলগাছ হবে ফুলে ভর্তি এবং গাছপালা ও লতানো গাছ দিয়ে বাগান সাজানো থাকবে। বাগানের মধ্যে জলাশয় বা সরোবর থাকলে আরও ভাল হয়। মানুষের শরীরে রক্ত যেমন চলাচল করে তেমনই বাগানে ফোয়ারা বা ঝর্ণা রচনা করলেই হবে না তাতে পানির চলাচল করা প্রয়োজন। তবেই এই সৌন্দর্য বাস্তু মতে সমৃদ্ধি লাভ করে। এই সব জলাশয় বা সরোবরে যদি মাছ ইত্যাদি পালন করা যায় তা হলে তা হবে আকর্ষক। অফিস, বাড়িঘর, বহুতল ভবন, হাউসিং কমপ্লেক্স, হাসপাতাল, গ্রন্থাগার, স্কুল ও কলেজ ভবনে ও তার চারপাশে বাগান করলে তার সবুজায়ন যেমন নয়নাভিরাম হয় তেমনই কাজের পরিবেশ তৈরি করতে গাছপালা বাগান সাহায্য করে।

ভাবতে অবাক লাগলেও এ কথা সত্যি যে, বৃক্ষ আয়ুর্বেদে কৃত্রিম উপায়ে তৈরি রক্‌ গার্ডেন ও গুহা, কৃত্রিম বনজঙ্গল-গাছপালা ইত্যাদি লাগানোর কথা বলা হয়েছে। এই রক্‌ গার্ডেন বাগান দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে করতে হবে। তুলসী ও অন্যান্য ক্ষুদ্র বনৌষধি গাছগাছড়া উত্তর-পূর্ব দিকে লাগাতে হবে। যে সব গাছে বড় বড় পাতা হয় সেগুলি দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে লাগানো যেতে পারে। ফলের গাছ লাগাতে হবে এই দুই দিকের মাঝামাঝি।

বাড়ির প্রধান প্রবেশদ্বারের সামনে কোনও প্রকার বড় বৃক্ষ থাকা ঠিক নয়। এটি দ্বারভেদ সৃষ্টিকারী। যে গাছ দিয়ে সাদা আঠা বের হয়, যেমন- রবার বৃক্ষ, ছাতিম, মনসা, ক্যাকটাস, বনসাই ইত্যাদি, সেই গাছ বসানোও শুভ নয়। আবার কাঁটাওয়ালা গাছ, যেমন -ক্যাকটাস অশুভ। কিন্তু গোলাপ ব্যতিক্রম। আবার লতা ও বাহারি ফুলের গাছ এবং সীমানা প্রাচীরে বসানো চলবে। বড় রাস্তার ধারে যে সব বাড়ি আছে সেখানে বাড়ির বাইরে নিম ও অশোক বৃক্ষ লাগানো খুবই ভালো। নিম দূষণ ও পোকামাকড়ের হাত থেকে রক্ষা করে। আর অশোক বৃক্ষ রক্ষা করে শব্দ দূষণ থেকে।

প্রতিটি বাড়িরই সীমানা প্রাচীর থাকে। প্রাচীন শাস্ত্র অনুসারে সীমানা প্রাচীরকে মজবুত করার জন্য সেখানে গাছ লাগাতে হবে। শুধু তাই নয়, বড় বড় পাথর গাছের চারপাশে সাজানোর কথাও বলা হয়েছে। সুতারাং, গাছপালা বাগান করার কথা বলে বাস্তব পরিবেশের সঙ্গে আমাদের এক চমৎকার বন্ধুত্ব গড়ে তোলার প্রস্তাবই করেছে। এই ব্যবস্থা দূষণ কমাতে শহরকে পরিস্কার ও সবুজ রাখার ক্ষেত্রে শুধু নয়, সমাজকেও সাহায্য করবে।

দোকান ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান:

যে কোনও ব্যবসা, তা সে একটি ভাড়ার দোকানঘর হোক অথবা একটি বা একাধিক দোকানঘর তৈরি করাই হোক বা ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান বা বাণিজ্যিক আবাসন গড়া হোক না কেন, সমৃদ্ধি, মুনাফা ও উন্নতির জন্য বাস্তুশাস্ত্রের সিদ্ধান্ত ও নিয়ম মেনে চলতে হবে। চললে সুফল পাওয়া যাবে।

দোকান ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানঃ
  • দোকান ঘরটির মুখ অর্থাৎ প্রধান প্রবেশদ্বার কোন দিকে, এটা দেখতে হবে। যদি উত্তর বা পূর্ব দিকে মুখ হয়, তা হলে সেই দোকান পশ্চিম বা দক্ষিণের চেয়ে ভাল হবে।
  • দোকানঘরটি যদি উত্তর-পূর্বদিকে বেড়ে থাকে, তা হলে এ ধরনের দোকান থেকে অনেক বেশি মুনাফা ও সমৃদ্ধি পাওয়া যাবে।
  • দোকান যদি দুই রাস্তার সংযোগস্থলে হয়, পূর্ব ও উত্তর দিকে রাস্তা থাকে, তা হলে ভাল।
  • যদি বেখাপ্পা আকারের দোকানঘর হয় তা হলে কিছুতেই ওই দোকান নেওয়া উচিত নয়। ত্রিকোণ ও সিংহ আকারের দোকান সাধারণ মানের।
  • দোকানঘরের সামনে অথব ঢোকার মুখে যেন কোনও রকমের বাধা, যেমন টেলিফোন বক্স, ইলেকট্রিক বক্স, ল্যাম্পপোস্ট, বড় গাছ ইত্যাদি না থাকে। প্রধান প্রবেশপথের ঠিক উলটো দিকে এইসব থাকলে তা দ্বারভেদ সৃষ্টি করে।

নিজের দোকান :

যদি নিজের দোকান হয় বা দোকানটি কিনে নেওয়া সম্ভব হয়, তা হলে সে ক্ষেত্রে নীচে দেওয়া নিয়মগুলি বিবেচনা করতে হবে, তাতে ফল ভাল হবে।

প্রথমেই দেখে নিতে হবে দোকানঘরটির আকার কেমন। চৌকো বা আয়তাকার হলে ভাল। বেখাপ্পা আকারের দোকান শুরু করার আগে সেটিকে সংশোধন করে নিতে হবে। যদি বাসস্তুশাস্ত্র অনুসরণ করে তা সংশোধন করা সম্ভব না হয় তা হলে সেই দোকান নেওয়া উচিত।
আগেই বলা হয়েছে, পূর্ব ও উত্তর দিকে রাস্তাযুক্ত দোকান ভাল। যদি পশ্চিম, দক্ষিণ অথবা দক্ষিণ-পশ্চিম দিক খোলা থাকে তা হলেও দোকানঘরটি ভালই হবে।
উত্তর-পূর্ব দিক যদি সামান্য এগিয়ে থাকে তা হলে দোকান বিশেষ ভাল।
দোকানঘরের দরজা উত্তর বা পূর্ব দিকে খোলা থাকবে। যদি সম্ভব হয় দক্ষিণ খোলা দোকান না নেওয়াই উচিত।
দক্ষিণ বা পশ্চিম দিকে শো-কেস রাখতে হবে। উত্তর-পূর্ব দিকে শো কেস বসানো চলবে না।
দক্ষিণ-পশ্চিম, দক্ষিণ বা পশ্চিম দিকে দোকানের মালপত্র জড়ো করে রাখতে হবে।
দোকানের মালপত্র দোকানের দক্ষিণ-পশ্চিম, পশ্চিম অথবা দক্ষিণ দিকের তাকে রাখতে হবে।
দোকানের মধ্যেই যদি চিলেকোঠা, চিলেঘর বা মেজেনাইন ফ্লোর তৈরি করতে হয় তা হলে সেটি করতে হবে শুধু দক্ষিণ এবং পশ্চিম দিকে। পূর্ব বা উত্তর দিকে যেন কিছুতেই না করা হয়।
দোকানের মধ্যে নামাজের জায়গা, পবিত্র আয়াত বা চিহ্ন উত্তর-পূর্ব কোণে রাখতে হবে। স্থানটি সব রকমের বাধামুক্ত ও পরিস্কার পরিচ্ছন্ন থাকবে। এখানে কোনও রকমের মালপত্র রাখা চলবে না। জায়গার অভাবে প্রয়োজনে ছোট শো-কেসে পবিত্র আয়াত বা চিহ্ন রাখা যাবে।
মালিক বা ম্যানেজার দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে বসবেন, মুখ থাকবে উত্তর বা পূর্ব দিকে।
অন্যান্য কর্মচারীর বসার জায়গা এমনভাবে সাজাতে হবে যাতে কাজ করার সময় তাদের মুখ থাকে উত্তর বা পূর্ব দিকে।
টাকা-পয়সা, পাশবই, অ্যাকাউন্টস বই ইত্যাদির আলামরি এমনভাবে রাখাতে হবে যাতে তা খোলার সময় মুখ থাকে উত্তর অথবা পূর্ব দিকে।
দোকানে পানির ব্যবস্থা যেন উত্তর-পূর্ব বা পূর্ব দিকে থাকে।

দক্ষিণ মুখি দোকান :

দক্ষিণমুখী দোকানের দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে মালিকের বসার ব্যবস্থা রাখতে হবে। দোকানদারকে পূর্ব অথবা পূর্বাংশের উত্তর-পূর্ব দিকে মুখ করে টেবিল নিয়ে বসতে হবে। তার ডানদিকে আয়রন চেস্ট বা আলমারি অথবা ক্যাশবাক্স থাকবে। এই ক্যাশবাক্স ইত্যাদির মুখ থাকবে উত্তর বা পূর্ব দিকে। ক্যাশবাক্স বা আলমারি সম্পূর্ণরূপে উত্তর-পূর্ব দিকে ঘুরিয়ে রাখা যাবে না। কারণ, ওরকম ঘুরিয়ে রাখলে আলমারির পিছনে দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে একটা শূন্যস্থান সৃষ্টি হবে এবং তার কুপ্রভাব পড়বে।

দোকানের মালপত্র তাকে রাখতে হলে সেই তাকগুলিকে পশ্চিমের দেওয়াল ঘেঁসে রাখতে হবে। এগুলি যেন আটকানো থাকে। এই সব তাকের মধ্যে ভারী মালপত্র মজুদ করতে হবে। হালকা মালপত্র উত্তর এবং পূর্ব দিকের তাকে রাখতে হবে। এ ক্ষেত্রে উত্তর ও পূর্ব দিকের দেওয়াল থেকে অন্ততপক্ষে তিন ইঞ্চি জায়গা ফাঁকা রাখতে হবে।
পূর্ব দিকের দেওয়ালের উত্তর অংশে অর্থাৎ উত্তর-পূর্ব বা ঈশান কোণে পশ্চিমমুখী করে পবিত্র আয়াত বা সূরা রাখা যাবে। এ ক্ষেত্রে উত্তর-পূর্ব কোণের উত্তরদিকের দেওয়াল ঘেঁসে আয়াতুল কুরসী বসাতে হবে। উত্তর-পূর্বের কুলুঙ্গিতে কোরআন শরীফের সূরা বা পবিত্র চিহ্ন রাখা যেতে পারে। উক্ত স্থান থেকে কমপক্ষে ছয় ইঞ্চি জায়গা ছেড়ে মালপত্র রাখা যেতে পারে।

দোকানের বেশিরভাগ জিনিসপত্র সম্ভব হলে পশ্চিম দিকের মেঝেতে চটের বস্তা, কাঠের বা কার্ডবোর্ডের বাক্স ইত্যাদি ভরে রাখতে হবে। এইগুলি তাকে না রাখাই ভাল। মালপত্র প্রচন্ড ভারী হলে সে সব পূর্ব ও উত্তর দিকে নূন্যতম ৩ ইঞ্চি এবং উত্তর-পূর্বে ন্যূনতম ১ ফুট জায়গা ছেড়ে রাখতে হবে। এভাবে জিনিসপত্র রাখলে ব্যবসায় দিনে দিনে উন্নতি ঘটবে। জিনিসপত্র রাখার বিষয়টিকে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে এবং সে জন্যই দোকানের মুখ যে দিকেই হোক না কেন, দোকানের মালপত্র যদি ওইভাবে রাখা হয় তা হলেও দোকানের ভালই হবে। দক্ষিণমুখী দোকানের চিত্রময় নির্দেশ।

পশ্চিমমুখী দোকান :

পশ্চিমমুখী দোকান বাস্তুমতে সাধারণ মানের। পশ্চিম দিকের সীমানা দেওয়াল সংলগ্ন দোকান তৈরি করতে হবে।দোকানের দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে চেয়ার টেবিল এরকমভাবে বসাতে হবে যাতে মুখ উত্তর দিকে থাকে। দোকান মালিককে উত্তরের দিকে মুখ করে বসতে হবে। আলমারি বা ক্যাশবাক্স দোকান মালিকের বাঁদিকে থাকবে। এগুলির মুখ থাকবে পূর্ব, পূর্বাংশের উত্তর-পূর্ব, উত্তর অথবা উত্তরাংশের উত্তর-পূর্ব দিকে। ক্যাশবাক্স বা আলামারি সম্পূর্ণরূপে উত্তর-পূর্ব দিকে না ঘুরে যায় এটা লক্ষ্য রাখতে হবে। কারণ, তা না হলে ক্যাশ বাক্স বা আলমারির পিছনের দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে একটা ফাঁক রয়ে যাবে। এবং তার ফলে খারাপ প্রভাব পড়বে। পবিত্র আয়াত বা চিহ্ন একই রকম জায়গায় থাকবে যেমনটি দক্ষিণমুখী দোকানের জন্য বলা হয়েছে।
উত্তরমুখী দোকান :

বাস্তুমতে দোকান তৈরি করলে উত্তরমুখী দোকান থেকে বিশেষ সুফল পাওয়া যায়। উত্তরমুখী দোকান উত্তরের সীমানা দেওয়াল কিছুটা ছেড়ে দিয়ে তৈরি করতে হবে (এ ক্ষেত্রে অবশ্যই পৌরসভা, সিটি কর্পোরেশন আইন অনুসারেই ছাড়তে হবে)। যে জায়গা ছেড়ে দেওয়া হবে তাতে দোকানের গ্রাহকদের প্রবেশের সিঁড়ি তৈরি করা যেতে পারে। দোকান মালিক পশ্চিমাংশের উত্তর-পশ্চিম কোনায় টেবিল বা চেয়ার পেতে পূর্বাংশের উত্তর-পূর্বদিকে মুখ করে বসবেন। ডান দিকে থাকবে ক্যাশবাক্স বা আলমারি। দোকান মালিক ইচ্ছে করলে তার ডান দিকে একটি টুলে ক্যাশবাক্স বা আলমারি রাখতে পারেন। ইচ্ছে করলে দোকান মালিক মেঝেতেও বসতে পারেন। দক্ষিণ-পশ্চিম কোনায় টাকা রাখার ক্যাশবাক্স বা আলমারি রাখা যেতে পারে।

দোকানের গ্রাহকরা এগিয়ে থাকা উত্তর বা উত্তরাংশের উত্তর-পূর্ব দিক দিয়ে দোকানে ঢুকবেন।মালপত্র রাখা, মজুদ করা ও পবিত্র আয়াত বা চিহ্ন টাঙানোর ক্ষেত্রে দক্ষিণ ও পশ্চিমমুখী দোকানের মতোই নিয়ম মানতে হবে।

উত্তরমুখী দোকানের চিত্রময় নির্দেশ :

চিত্রঃ

বহুতল বিশিষ্ট বাণিজ্যিক ভবন

যেটাকে আমরা মার্কেট বলি। বর্তমানে স্থানাভাবে, জনসংখ্যার চাপে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য ক্রয় করার নিমিত্তে, দ্বিতল বা ত্রিতল মার্কেটে আর হচ্ছেনা। ফলশ্রুতিতে এখন মার্কেটের রূপ নিয়েছে উচ্চভবনের ন্যায়, এটাকেই আমরা পত্রিকান্তরে দেখতে পাই কমার্শিয়াল কমপ্লেক্স নামে, দোকান সম্পর্কে যে সব বাস্তু বিধান দেয়া হয়েছে তার সবগুলিই কমার্শিয়াল কমপ্লেক্সের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে,শুধুগোটাকয়েকবিধানমেনেচলতেহবে।
সিঁড়ি এবং লিফ্‌ট দক্ষিণ-পশ্চিম, পশ্চিম এবং দক্ষিণ দিকে হবে। সিঁড়ি ঘুরবে (নীচ থেকে উপরে আরোহনের সময়) ডান দিকে অর্থাৎ ঘড়ির কাঁটার মত।
পানির রিজার্ভ ট্যাংক থাকবে ঈশাণ কোণে, পূর্বদিকে, অথবা পূর্বাংশের উত্তর দিকে।
অফিস ঘর, চার তলা থেকে শুরু হবে এবং ঘর ও হল ঘরের মাঝে করিডোর রাখতে হবে।
বেসমেন্ট ১, ২, ৩ তলায় দোকান ঘর, হোটেল, ব্যাংক বীমার অফিস থাকবে।
গাড়ি পার্কিং এর ব্যবস্থা থাকবে কমপ্লেক্স-এর উত্তর, উত্তর-পূর্ব ও পূর্ব দিকে, কিংবা কমপ্লেক্সের বাহিরে মুখোমুখী।
বৈদ্যুতিক জেনারেটর বসবে অগ্নি কোণে।
শৌচাগার বায়ু কোণে ও নৈঋত কোণে রাখতে হবে, এর অর্থাৎ শৌচাগারের উচ্চতা হবে মেইন ফ্লোর থেকে ২ ফুট উঁচু।
ঈশান কোণে ও উত্তর দিকে ফুল গাছ লাগাতে হবে এবং তা অবশ্যই বাস্তু শাস্ত্রমতে শুভ গাছ, যা আপনারা পরবর্তী সংখ্যায় পড়তে পারবেন।
কমার্শিয়াল সীমানা প্রাচীর দক্ষিণ ও পশ্চিম দিকে উঁচু রাখতে হবে এর ফলে অপরাহ্নে আলট্রা ভায়োলেট-রে থেকে আমরা মুক্তি পাব এবং ইনফ্রা-রে-রেডিয়েশন অধিক মাত্রায় পেয়ে বাণিজ্য শুভফল পাব। এইInfra-Red-Rayআমরা সূর্যোদয় থেকে মধ্যাহ্ন সময় পর্যন্ত পেয়ে থাকি। কিন’ আমরা যদি উত্তর ও পূর্ব দিকে সীমানা দেয়াল উঁচু রাখি তবে ব্যবসা ক্ষেত্রে আশানুরূপ সুফল পাব না।
মাটির নীচে বেসমেন্ট ঈশাণ, উত্তর, পূর্ব দিকে করতে হবে। কোন ক্রমেই দক্ষিণ-পশ্চিম, নৈঋত কোণে করা যাবে না। বায়ু কোণে করলে এর উচ্চতা হবে ঈশাণ, উত্তর, পূর্ব দিকের তুলনায় সামান্য উঁচু। দক্ষিণ-পশ্চিম, নৈঋত দিকে বেসমেন্ট করলে অবশ্যই তা কমার্শিয়াল কমপ্লেক্সের জন্য ক্ষতি বয়ে আনবে। বাস্তুশাস্ত্র এই দিক সমূহকে উঁচু রাখতে বলা হয়েছে এবং এই দিকে স্থায়ীভাবে কোন গর্ত না করার কথাও বলেছে।
অগ্নি কোণ ও বায়ু কোণে ভৃত্যদের বাসস্থান করতে হবে।
ওভার হেড পানির ট্যাংক নৈঋত কোণে সর্বোত্তম। এরূপ স্থিতি না পাওয়া গেলে বায়ু কোণে করা যাবে।
নিরাপত্তা রক্ষীদের কক্ষ হবে প্রধান প্রবেশ পথের সন্নিকটে দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে। কক্ষের মুখ থাকবে পূর্ব অথবা বায়ু কোণে যাতে করে নিরাপত্তা রক্ষী সব ভালভাবে দেখতে পারে।
ভৃত্যদের বাসস্থান যেন উত্তর ও পূর্ব দিকের সীমানা দেয়াল যেন স্পর্শ না করে।