fbpx

শিল্পবাস্তু

বাস্তুশাস্ত্র অনুসারে কলকারখানা ও শিল্প প্রতিষ্ঠানের জন্য জমি বাছাই করা উচিত।এ ছাড়া শুভ মুহূর্ত দেখে কলকারখানা ভবনের নির্মাণের কাজ শুরু করা বাঞ্ছনীয়।যদি কেউ নতুন কারখানা সস্থাপনে উদ্যোগী হন এবং এই সমস্ত নিয়ম যদি তিনি পালন করেন, তবে অল্প দিনের মধ্যেই কারখানার উন্নতি হবে।যে সব কারখানা সমস্যার মধ্যে দিয়ে চলছে সেখানেও যদি বাস্তুশাস্ত্রের নিয়ম অনুসারে বদল করা যায় তবে সেই সব কারখানাও সুষ্ঠুভাবে চলতে শুরু করবে।নীচে এই সম্পর্কে কিছু তথ্য সন্নিবেশিত হল।

যে জমি আর্দ্র, যার তলায় পানির স্তর বেশি নীচে নয়, এরকম উর্বরা জমি কলকারখানার পক্ষে অনুকুল।কলকারখানার জমি যেন পূর্ব বা উত্তর দিকে ঢালু হয়।জমির উত্তর-পূর্ব অংশ যেন কোনওভাবেই কাটা না হয়।নীচের চিত্রে উত্তর বা পূর্ব দিকের ঢাল বুঝানো হলো।

চিত্রঃ

উত্তর বা পূর্ব দিক্‌ যদি উঁচু থাকে তা হলে নির্মাণকার্য শুরুর আগে জমিকে সমান করে নেওয়া উচিত।কোনও মতেই যেন দক্ষিণ বা পশ্চিমে নিচু না থাকে।

কলকারখানায় প্রবেশ করার রাস্তা যদি উত্তর বা পূর্বদিকে থাকে তা হলে খুব ভাল।পশ্চিম দিকে রাস্তা মাঝারি ধরণের অনুকুল এবং দক্ষিণ দিকে রাস্তা আদৌ ভাল নয়।

উত্তর কিংবা পূর্ব দিকে কলকারখানার প্রধান ফটক হওয়া বাঞ্ছনীয়।এটা শুভ।এ ধরণের গেটযুক্ত কলকারখানায় মালিক ও শ্রমিক উভয়েই লাভবান হবেন।দক্ষিণ দিকে কলকারখানার প্রধান দরজা করা উচিত নয়, কারণ এই দিকগুলি হল দুর্বল, নিম্নস’।কলকারখানার প্রধান দরজার রং সবুজ অথবা নীল হওয়া বাঞ্ছনীয়।

কলকারখানার মধ্যে নলকুপ বা জলধার উত্তর-পূর্ব দিকে হওয়া উচিত।নলকুপ বা মাটির তলার জলাধার কখনওই দক্ষিণ, দক্ষিণ-পূর্ব, দক্ষিণ-পশ্চিম বা উত্তর-পশ্চিম দিকে হওয়া বাঞ্ছনীয় নয়।ওভারহেড ট্যাঙ্ক উত্তর-পূর্ব দিকে হবে না।বরং দক্ষিণ, পশ্চিম বা দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে হওয়া বাঞ্ছনীয়।

ফার্নেস, বয়লার, চিমনি, হিটার, জেনারেটর, বৈদ্যুতিক সাব-স্টেশন ইত্যাদি দক্ষিণ-পূর্ব দিকে রাখতে হবে।কারণ কলকারখানার এই দিকটা ‘আগ্নেয়’ এলাকা।কারখানার চিমনি দক্ষিণ-পূর্বের পূর্ব দিকে রাখা যেতে পারে।

জমির দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে কারখানা করা উচিত।কলকারখানার ছাদ ও শেড ঢালু হবে পূর্ব দিকে অথবা উত্তর দিকে।মনে রাখতে হবে ছাদের চূড়া কলকারখানার বাড়ির পশ্চিম বা দক্ষিণ অংশে থাকবে।

কলকারখানা, শিল্প-প্রতিষ্ঠানের অফিস হবে সীমানা প্রাচীর থেকে কিছুটা দূরে উত্তর অথবা মধ্য-পূর্ব দিকে।ছবিতে মূল কারখানা ও প্রশাসনিক ভবনের অবস্থান দেখানো হল।

চিত্রঃ

কলকারখানা সংলগ্নলন বা সবুজ অংশ উত্তর অথবা পূর্ব দিকে তৈরি করতে হবে।লম্বা উঁচু গাছ কারখানার দক্ষিণ-পশ্চিম অথবা উত্তর-পশ্চিম দিকে লাগাতে হবে।

প্রশাসনিক ভবনের উচ্চতা মূল কারখানা থেকে নিচু রাখতে হবে।ছবির মাধ্যমে তা বোঝানো হল।

ছবিঃ

কারখানার গুদাম বা ষ্টোর রুম থাকবে দক্ষিণ-পশ্চিম, দক্ষিণ অথবা পশ্চিম দিকে।কাঁচামাল, আধা তৈরি মাল এবং তৈরি মাল যথাক্রমে দক্ষিণ-পশ্চিম, মধ্য-পশ্চিম এবং উত্তর-পশ্চিম দিকে মজুত রাখতে হবে।কাঁচামাল অথবা তৈরি মাল উত্তর-পূর্ব দিকে মজুত করা বাঞ্ছনীয় নয়।কারণ এই এলাকাটি অত্যন্ত হালকা ধরণের।মোটরগাড়ি ও অন্যান্য যানবাহন উত্তর-পশ্চিমের উত্তর দিকে অথবা দক্ষিণ-পূর্বের পূর্ব দিকে রাখতে হবে।

হালকা ওজন যন্ত্র মধ্য-পশ্চিম অথবা মধ্য-উত্তর দিকে কারখানার ফটকের কাছে রাখা বাঞ্ছনীয়।বড় বিশেষ ভারী ওজন যন্ত্র দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমের পশ্চিম দিকে রাখা উচিত।নীচের চিত্রে ওজন যন্ত্র স্থাপনের বিকল্প দেখানো হলো।

কারখানায় ইবাদতখানা, অভ্যর্থনা, অতিথি-আবাস ও পানীয় জলের ব্যবস্থা রাখতে হবে উত্তর-পূর্ব দিকে।কর্মী ও শ্রমিকদের শৌচাগার ও গোসলখানা থাকবে কারখানা বাড়ির দক্ষিণ বা পশ্চিম দিকে।কর্মচারী ও শ্রমিকদের ক্যান্টিন থাকবে কারখানার দক্ষিণ-পূর্ব দিকে।বিভিন্ন দফতরের স্থান নীচে ছবির মাধ্যমে দেখানো হল।

চিত্রঃ

নিরাপত্তা রক্ষীদের অফিস প্রবেশ দ্বারের উপর নির্ভর করে।যদি কারখানার উত্তর-পূর্বের পূর্ব দিকে প্রধান দরজা তৈরি করা হয় তা হলে তার দক্ষিণ দিকে নিরাপত্তা বাহিনীর ঘর হবে।যদি প্রবেশদ্বার উত্তর-পূর্বের উত্তর দিকে হয় তা হলে নিরাপত্তা বাহিণীর ঘর উত্তর-পূর্বের পশ্চিম দিকে করা উচিত।নীচের ছবির মাধ্যমে বিকল্পসহ দেখানো হল।

চিত্রঃ

কারখানার মেশিনপত্র বসাবার সময় খেয়াল রাখতে হবে যাতে সবচেয়ে ভারী মেশিনপত্র দক্ষিণ বা পশ্চিম দিকে বসে।কাঁচামাল রাখার জায়গা কারখানার ভিতরের দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে হওয়া উচিত।উৎপাদনে নিয়োজিত কাঁচামাল এবং প্রায় সম্পূর্ণ মাল রাখার জায়গা কারখানার ভিতরের পশ্চিমাঞ্চলে হওয়া উচিত।তৈরি মাল এবং সরবরাহ করার জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুত মাল কারখানার উত্তর-পশ্চিম দিকে রাখা উচিত।

চিত্রঃ

একটি আদর্শ কারখানার নমুনা

চিত্রঃ

১। প্রধান দরজা, ছোট অথবা সহায়ক যন্ত্রপাতি, কর্মচারীদের থাকার বাসস্থান, ওজন যন্ত্র, পণ্য বিক্রির অফিস, ক্যাশ বা হিসাব পরীক্ষকের অফিস।
২। দরজা, প্রশাসনিক অফিস, টিউবওয়েল, ভূগর্ভস্থ জলাধার, মসজিদ, অতিথিশালা, অভ্যর্থনা গৃহ, উম্মুক্ত বাগান, চিকিৎসালয়।
৩। প্রধান দরজা, ছোট সহায়ক যন্ত্রপাতি, কারখানার অফিস, সময় নিয়ন্ত্রণ অফিস।
৪। ফার্নেস, বয়লার, চিমনি, জেনারেটর, বৈদ্যুতিক সাব-স্টেশন, গাড়ি রাখার জায়গা, ক্যান্টিন, বড় গুদাম, অগ্নি সঞ্চালিত ওয়ার্কশপ, অ্যাসিড ট্যাঙ্ক।
৫। ভারী যন্ত্রপাতি, ওজন যন্ত্র, শৌচাগার বা স্নানাগার, কর্তার অফিস।
৬। ষ্টোর ও গুদাম, ভারী যন্ত্রপাতি ও সাজসরঞ্জাম, পরিত্যক্ত লোহা-লক্কড় রাখার স্থান।
৭। কারখানার কাঁচামাল ও ভারী ওজন যন্ত্র।
৮। কারখানার অফিস, মালপত্র রাখার গুদাম, হালকা যন্ত্রপাতি, সেলস্‌ অফিস।
৯। খালি জায়গা বা বাগান। কোনও ভারী যন্ত্রপাতি যেন এখানে বসানো না হয়।